শনিবার, ২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

হলি আর্টিজান: এখনও ধরা পড়েনি হামলায় জড়িত পাঁচ জঙ্গি

সেরাকণ্ঠ ডট কম :
জুলাই ১, ২০১৭
news-image

গুলশানের অভিজাত হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলায় জড়িত আটজন পরে বিভিন্ন অভিযানে নিহত হলেও পাঁচ জঙ্গি এখনও ধরা পড়েনি। তাদের মধ্যে তিনজনকে বিপজ্জনক এবং জঙ্গিবাদ দমনে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট।

গোয়েন্দারা বলছেন, গুলশান হামলার পরিকল্পনা ও এর বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে তামিম চৌধুরী-মেজর (অব.) জাহিদ-হাসনাত করিম-রাজীব গান্ধীসহ কয়েকজন ও সরাসরি হামলাকারীরা ছাড়াও পাঁচ জঙ্গির বড় ধরনের ভূমিকা ছিল। তারা হচ্ছে: সোহেল মাহফুজ ওরফে হাতকাটা মাহফুজ, রাশেদ ওরফে র‌্যাশ, বাশারুজ্জামান ওরফে চকলেট, ডাক্তার রোকন ও ছোট মিজান।

গোয়েন্দা সূত্র জানায়, জঙ্গি সোহেল মাহফুজ হলো গুলশান হামলার অস্ত্র ও গ্রেনেড সরবরাহের মূলহোতা। সে জেএমবির মূলধারার সঙ্গে যুক্ত ছিল। জেএমবির শীর্ষ ৬ জঙ্গির ফাঁসি কার্যকর হলে সংগঠনটির আমির হয় সাইদুর রহমান। ওই সময় জেএমবির শুরা (নীতি নির্ধারণী) কমিটির সদস্যপদ পায় মাহফুজ। ২০১০ সালের দিকে সাইদুর রহমান গ্রেফতার হয়। এরপর দীর্ঘদিন আত্মগোপনে থেকে উত্তরাঞ্চলে জেএমবিকে নেতৃত্ব দিয়ে আসছিল মাহফুজ।

নারায়ণগঞ্জে নিহত নব্য জেএমবির সমন্বয়ক তামিম চৌধুরীর সঙ্গেও তার যোগাযোগ ছিল। পরে সে নব্য জেএমবিতে যুক্ত হয়। এরপর থেকে সে নব্য জেএমবির অস্ত্র কেনা, গ্রেনেড তৈরি এবং সরবরাহসহ আইটি শাখার প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছে বলে তথ্য পেয়েছে পুলিশ।

আরেক জঙ্গি রাশেদ ওরফে র‌্যাশ গুলশান হামলার পরিকল্পনাকারীদের একজন। হামলাকারী ৫ জঙ্গিকে হামলার আগে রাজধানীর বসুন্ধরার যে বাসায় রাখা হয়েছিল ওই বাসায় রাশেদের নিয়মিত যাতায়াত ছিল।

জঙ্গি বাশারুজ্জামান ওরফে চকলেট গুলশান হামলায় দুবাই থেকে আসা ১৪ লাখ টাকা বাংলাদেশে গ্রহণ করে বলে তথ্য রয়েছে তদন্ত সংস্থার কাছে। দুবাইয়ে পলাতক মুফতি শফিকুর রহমান নব্য জেএমবিকে নিয়মিত অর্থ সহায়তা করতো। বাশারুজ্জামান ওই অর্থ সংগ্রহ করে মূল সমন্বয়ক তামিমের কাছে পৌঁছে দিতো।

ডাক্তার রোকন সপরিবার সিরিয়ায় পলাতক রয়েছে। গুলশানে জঙ্গি হামলার আগে নিউ জেএমবির তহবিলে টাকা দেয় ডাক্তার রোকন। সংগঠনটির শুরা বোর্ডের এক সদস্য টাকা গ্রহণ করে। দুই দেশ ঘুরে হাত বদল হয়ে এ টাকা বাংলাদেশে পৌঁছায়।

আরেক জঙ্গি ছোট মিজান গুলশান হামলাসহ নব্য জেএমবির দেশব্যাপী হামলায় ব্যবহৃত অস্ত্র ও গ্রেনেডের যোগানদাতা।

পুলিশ জানায়, দুই মিজানের নেতৃত্বে গুলশান হামলার অস্ত্র ও গ্রেনেড সরবরাহ করা হয়। তাদের দুইজনের বাড়িই চাঁপাইনবাবগঞ্জে। তাদের একজন মিজানুর রহমান ওরফে বড় মিজান যাকে এরইমধ্যে গুলশান হামলার মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে। এখন ছোট মিজানকে খুঁজছে পুলিশ।

ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম বলেন: মামলাটিতে গ্রেফতার করা হয়েছে চারজনকে, আমরা এখনো পাঁচজনকে খুঁজছি, তদন্তে তাদের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে। ওই পাঁচজনের মধ্যে তিনজন এই মামলার তদন্তের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ আসামি।

‘হামলার পরিকল্পনা ও এটির বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ার সাথে তাদের খুব বড় ধরনের ভূমিকা ছিল। এরা হচ্ছে- সোহেল মাহফুজ, রাশেদ ওরফে র‌্যাশ এবং বাশারুজ্জামান ওরফে চকলেট।’

গত বছরের ১ জুলাই রাতে গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটে।জঙ্গিরা ওই রাতে ২০ জনকে হত্যা করে, যাদের নয়জন ইটালির নাগরিক, সাতজন জাপানি, তিনজন বাংলাদেশি এবং একজন ভারতীয়। এ ছাড়া সন্ত্রাসীদের হামলায় পুলিশের দু’জন কর্মকর্তা প্রাণ হারান। জঙ্গিদের গুলি ও বোমায় আহত হন পুলিশের অনেকে।

পরদিন সকালে সেনা কমান্ডোদের অভিযানে পাঁচ জঙ্গিসহ ছয়জন নিহত হয়। উদ্ধার হন তিন বিদেশিসহ ১৩ জন।