বৃহস্পতিবার, ১৪ই নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

ঢাকা উত্তরে মশকনিধন কার্যক্রম এক মাস বাড়ানোর ঘোষণা

সেরাকণ্ঠ ডট কম :
জুলাই ৩১, ২০২৩
news-image

ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের বিশেষ মশকনিধন কার্যক্রম এক মাস বাড়িয়ে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত করার ঘোষণা দিয়েছেন মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম। সোমবার (৩১ জুলাই) সকালে রাজধানীর দক্ষিণখানে স্কুলে স্কুলে শিক্ষার্থীদের মাঝে ‘মশার কামড় ক্ষতিকর’ শীর্ষক সচেতনতামূলক কার্টুন বই বিতরণকালে ডিএনসিসি মেয়র এ ঘোষণা দেন।

শুরুতে ডিএনসিসি মেয়র দক্ষিণখান মোল্লারটেক উদয়ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে সচেতনতামূলক কার্টুন বই বিতরণ করেন। পরে তিনি দেওয়ানপাড়া মডেল স্কুলের শিক্ষার্থীদের মাঝে বই বিতরণ করেন। ওই দুটি স্কুলে প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মাঝে বই বিতরণ করা হয়। শিক্ষার্থীরা বইটি পাওয়ার পরে অঙ্কন করে। অঙ্কনে ভালো করায় প্রতি ক্লাসের পাঁচজন শিক্ষার্থীকে পুরস্কার হিসেবে গাছের চারা ও বই দেন ডিএনসিসির মেয়র।

মেয়র বলেন, ‘আমরা আমাদের শিশুদের সুপার হিরো বানাতে চাই মশার বিরুদ্ধে। শিশুরা যদি মশার বিষয়ে জানতে পারে এবং কামড় থেকে নিজেদের মুক্ত রাখতে পারে, তাহলে অনেকাংশেই আমরা মশাবাহিত রোগ রুখতে পারব। আমাদের ছাপানো আর্ট বুকটির মাধ্যমে শিশুরা মশার প্রজননস্থল, ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে জানতে পারবে। বইটি কাউন্সিলরদের মাধ্যমে ঢাকা উত্তরের সব কিন্ডারগার্টেন ও প্রাইমারি স্কুলে পৌঁছে দেওয়া হবে। ১ লাখ বই বিতরণ শেষ হলে আমরা আরও ৫ লাখ বই ছাপিয়ে শিশুদের মাঝে বিতরণ করব।’

শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘তোমরা বাবা-মা, ভাই-বোন, দাদা-দাদি, নানা-নানিসহ আত্মীয়- স্বজন এবং পাড়া প্রতিবেশীদের জানাবে, কোথাও যেন পানি জমে না থাকে। বাসা, বারান্দা, ছাদ সব জায়গা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।’

সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে ডিএনসিসির মেয়র বলেন, ‘ডেঙ্গু প্রতিরোধে ডিএনসিসি তিন স্তরের কার্যক্রম শুরু করেছে। কাউন্সিলরদের নেতৃত্বে নিজ নিজ এলাকার মসজিদের ইমাম, স্কুলের শিক্ষক ও অন্যান্য গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে করণীয় বিষয়ে সভা করতে হবে। আজ থেকে অনেক ওয়ার্ডে এটি শুরু হয়েছে৷ এই সপ্তাহের মধ্যে প্রতিটি ওয়ার্ডে এই সচেতনতামূলক সভা আয়োজন করতে হবে।’

সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা সিটি কর্পোরেশন থেকে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করছি। মশক নিধন কার্যক্রমের পাশাপাশি অভিযান চালানো হচ্ছে। অভিযান আরও জোরদার করতে ১০টি অঞ্চলের জন্য ১০ জন ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করা হচ্ছে। আমরা দ্রুতই এডিসের লার্ভা ধ্বংসে কার্যকরী বায়োলজিক্যাল কীটনাশক বিটিআই প্রয়োগ করব। আমাদের কাউন্সিলররা মাঠে আছে। সবাইকে সম্পৃক্ত করে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে পারলেই ডেঙ্গু পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে।’

এ সময় ডিএনসিসি মেয়র ট্রাকে উঠে এডিস মশার উৎসস্থল—গাড়ির পরিত্যক্ত টায়ার, ডাবের খোসা, মাটির পাত্র, খাবারের প্যাকেট, অব্যবহৃত কমোড—এগুলো দেখিয়ে শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকদের সচেতন করেন। শিক্ষার্থীরা মেয়রের আহ্বানে সাড়া দিয়ে তিন দিনে এক দিন জমা পানি ফেলে দেওয়ার ও প্রতি শনিবার সকালে ১০টায় ১০ মিনিট বাসা-বাড়ি পরিষ্কার করার অঙ্গিকার করে।

ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে মশকনিধন বিষয়ে প্রচারাভিযান শেষে ডিএনসিসি মেয়র দক্ষিণখান ও উত্তরখান এলাকায় চলমান উন্নয়ন কাজ পরিদর্শন করেন এবং এলাকাবাসীর সঙ্গে মতবিনিময় করেন।

এলাকাবাসীর উদ্দেশে মেয়র বলেন, ‘যেকোনো উন্নয়ন কার্যক্রম চলাকালে মানুষের চলাচলে কিছুটা বিঘ্ন হয়। নতুনভাবে সংযুক্ত ওয়ার্ডগুলোতে টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে আমরা প্রশস্ত ড্রেন নির্মাণ করে তারপর রাস্তা নির্মাণ করছি, এতে একটু বেশি সময় লাগছে। জলাবদ্ধতা যেন না হয়, সেজন্যই রাস্তা নির্মাণের আগে প্রশস্ত ড্রেন নির্মাণ করা হচ্ছে। রাস্তা যদি ২০ ফুট প্রশস্ত না হয়, সেখানে সিটি কর্পোরেশন কোনো কাজ করবে না।’ কমপক্ষে ২০ ফুট প্রশস্ত রাস্তা নির্মাণের ক্ষেত্রে সবাইকে সহযোগিতার আহ্বান করেন ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলাম।

প্রচারাভিযান ও পরিদর্শনে অন্যান্যের সঙ্গে আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা-১৮ আসনের সংসদ সদস্য মোহাম্মদ হাবিব হাসান, ডিএনসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম শফিকুর রহমান, প্রধান প্রকৌশলী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুহ. আমিরুল ইসলাম, অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. শরীফ উদ্দীন, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী খন্দকার মাহবুব আলম, স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মো. ইমদাদুল হক, আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা সাজিয়া আফরীন, কাউন্সিলর ডি এম শামিম, জয়নাল আবেদীন ও মোতালেব মিয়া এবং সংরক্ষিত ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জাকিয়া সুলতানা প্রমুখ।