মঙ্গলবার, ১৬ই এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

রিজার্ভ থেকে আর কোনো ফান্ড নয়: গভর্নর

সেরাকণ্ঠ ডট কম :
জানুয়ারি ৩০, ২০২৩
news-image

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার বলেছেন, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে আপাতত আর কোনো ফান্ড গঠন করা হবে না। চলমান ইডিএফ ফান্ড থেকে প্রদানকৃত অর্থ সমন্বয় করে এর আকার ধীরে ধীরে কমানো হবে। ইতোমধ্যে ইডিএফ ফান্ডে এক বিলিয়ন ডলার সমন্বয় হয়েছে।

সোমবার (৩০ জানুয়ারি) দেশের রপ্তানিমুখী শিল্পের বিকাশ ও প্রসারের চলমান ধারা অব্যাহত রাখার লক্ষ্যে দেশীয় মুদ্রায় বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক গঠিত ১০ হাজার কোটি টাকার রপ্তানি সহায়ক প্রাক-অর্থায়ন তহবিলে (ইএফপিএফ) অংশগ্রহণকারী ব্যাংকগুলোর সাথে চুক্তি সম্পাদনকালে তিনি এসব কথা বলেন। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এ অনুষ্ঠানে ৪৯টি তফসিলি ব্যাংক অংশ নিয়ে চুক্তিতে স্বাক্ষর করে।

এসময় গভর্নর আরও বলেন, কোভিড-১৯ বা করোনা মহামারি পরবর্তী অর্থনৈতিক অভিঘাত ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণে বিশ্ব অর্থনীতিতে বিরূপ অবস্থা বিরাজ করছে। এ প্রেক্ষিতে দেশের রপ্তানিমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠানসমূহকে অধিকতর অভিঘাত সহনশীল করার পাশাপাশি এ খাতের বিকাশ ও প্রসারের চলমান ধারা অব্যাহত রাখার লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের সম্পূর্ণ অর্থায়নে ১০ হাজার কোটি টাকার একটি রপ্তানি সহায়ক প্রাক-অর্থায়ন তহবিল (ইফপিএফ) গঠন করা হয়।

এছাড়া, সরকারের অন্তর্ভুক্তিমূলক আর্থসামাজিক উন্নয়ন কৌশলের সাথে সঙ্গতি রেখে বাংলাদেশ ব্যাংক ইতোমধ্যে ২০২২-২৩ অর্থবছরের দ্বিতীয় ষান্মাসিকের বিচক্ষণ মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছে।পাশাপাশি কৃষক, নারী উদ্যোক্তা, কুটির শিল্পসহ ক্ষুদ্র, মাঝারি ও বৃহৎ উদ্যোক্তা এবং রপ্তানিকারক ও ব্যবসায়ীদের জন্য বেশ কয়েকটি প্রণোদনা ঋণ প্যাকেজ বাস্তবায়ন, ব্যাংকগুলোকে নীতি সহায়তা প্রদান, আর্থিক অন্তর্ভুক্তির আওতায় অধিকতর মানুষকে জাতীয় উৎপাদনের সঙ্গে সম্পৃক্তকরণ এবং সমাজের দরিদ্র ও অবহেলিত জনগোষ্ঠীর আর্থিক ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ ব্যাংক নিরন্তর কাজ করে চলেছে।

আব্দুর রউফ তালুকদার বলেন, নতুনভাবে গঠিত প্রাক-অর্থায়ন তহবিলটিও দেশের রপ্তানি খাতের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস। ইএফপিএফ-এর অর্থায়ন কার্যক্রম শীঘ্রই শুরু হবে। মাত্র ৪ শতাংশ সুদে এ তহবিল থেকে কাঁচামাল ক্রয় বা আমদানির বিপরীতে প্রত্যক্ষ ও প্রচ্ছন্ন রপ্তানিকারকদের দেশি মুদ্রায় ঋণ নেওয়ার সুযোগ থাকবে, যার মেয়াদ হবে ১৮০ দিন। ব্যাংক পর্যায়ে সুদহার হবে ১.৫ শতাংশ।

অনুষ্ঠানে ডেপুটি গভর্নর আবু ফরাহ মো. নাছের স্বাগত বক্তব্য রাখেন। তিনি তার বক্তব্যে নতুন এই তহবিলের বৈশিষ্ট্য ও সুবিধাসমূহ বিস্তারিত তুলে ধরেন। অনুষ্ঠানের সভাপতি নির্বাহী পরিচালক নূরুন নাহার তহবিল সম্পর্কে ধারণা সম্বলিত একটি পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন প্রদান করেন।

এছাড়া, সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আফজাল করিম এবং অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান ও ব্র্যাক ব্যাংক লিমিটেডের ব্যবস্থপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী সেলিম আর. এফ. হোসেন তাদের বক্তৃতায় তহবিলটি যথাযথভাবে বাস্তবায়নের আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

এছাড়া, অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগের পরিচালক মাকসুদা বেগম, একই বিভাগের ইএফপিএম ইউনিটের পরিচালক মোহাম্মদ ইব্রাহীম ভূঁইয়া ও অতিরিক্ত পরিচালক মো. নাজিম উদ্দিনসহ অন্যান্য কর্মকর্তা এবং সংশ্লিষ্ট ব্যাংকসমূহের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন। অংশগ্রহণ চুক্তিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগের পরিচালক মাকসুদা বেগম এবং স্ব-স্ব ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকগণ স্বাক্ষর করেছেন।

প্রসঙ্গত, রপ্তানি খাতকে সহায়তা করতে বর্তমানে আরও দুটি তহবিল চালু রয়েছে। এগুলো হচ্ছে- ৭০০ কোটি ডলারের রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল (ইডিএফ), ৫ হাজার কোটি টাকার প্রাক জাহাজীকরণ তহবিল। এছাড়া দেশীয় শিল্প ও রপ্তানিমুখী শিল্পের যন্ত্রপাতি এবং কাঁচামাল আমদানির জন্য রয়েছে আরও তিনটি তহবিল। এর একটি মধ্যে ২০ কোটি ডলারের, একটি ২০ কোটি ইউরো ও বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় রয়েছে আরও একটি তহবিল।

ইডিএফ থেকে বৈদেশিক মুদ্রায় রপ্তানি শিল্পের কাঁচামাল আমদানির জন্য ঋণ দেওয়া হয়। এর চাহিদা ব্যাপক। কিন্তু আইএমএফ এ তহবিলের আকার ছোট করতে বলেছে। এছাড়া বিভিন্ন তহবিলে বরাদ্দ বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ থেকে বাদ দিতে বলেছে।এ ছাড়া বৈদেশিক মুদ্রায় গঠিত বাকি তিনটি তহবিলের ব্যবহার কম। এ কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রায় গঠিত তিনটি তহবিলের আকার ছোট করে আনছে। প্রাক জাহাজীকরণ তহবিলের ব্যবহার কম হওয়ায় এর বিভিন্ন শর্ত শিথিল করেছে।

দেশীয় মুদ্রায় গঠিত নতুন ইএফপিএফ তহবিল থেকে অর্থ নিলে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে দেড় শতাংশ সুদ দিতে হবে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে। এর বিপরীতে গ্রাহকদের কাছ থেকে ব্যাংক ৪ শতাংশ সুদ আদায় করতে পারবে। এটি একটি ঘূর্ণায়মান তহবিল হবে। তহবিলের বিনিয়োগ থেকে সুদ আদায় হয়ে এর আকার বাড়ানো হবে। পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত এ তহবিলের কার্যক্রম চলমান থাকবে। সরাসরি রপ্তানিকারক ও প্রচ্ছন্ন রপ্তানিকারকরা এ তহবিল থেকে ঋণ পাবেন।

তহবিল থেকে বস্ত্র, পোশাক, নিটওয়্যার শিল্পের উদ্যোক্তারা ব্যাক টু ব্যাক এলসির বিপরীতে কাঁচামাল আমদানি করতে যে অর্থের প্রয়োজন হবে তার পুরোটাই ঋণ হিসাবে পাবেন। তবে ২০০ কোটির বেশি ঋণ দেওয়া যাবে না। স্থানীয় ব্যাক টু ব্যাক এলসির বিপরীতে সর্বোচ্চ ১৫০ কোটি টাকা ঋণ দেওয়া যাবে। ঋণের একটি কিস্তি পরিশোধের পর আবার ঋণ নেওয়া যাবে। তবে নিয়ন্ত্রণবহির্ভূত কোনো কারণে রপ্তানির মূল্য দেশে না এলে দ্বিতীয় দফায় ঋণ নিতে পারবেন।

প্যাকেজিং শিল্পের উদ্যোক্তাদের সর্বোচ্চ ২০ কোটি টাকা, প্লাস্টিক শিল্পের উদ্যোক্তাদের সর্বোচ্চ ১০ কোটি টাকা, সিরামিক খাতের উদ্যোক্তাদের সর্বোচ্চ ৭ কোটি টাকা এবং অন্য রপ্তানিকারকদেরকে সর্বোচ্চ ৫ কোটি টাকার ঋণ দেওয়া যাবে। ঋণের মেয়াদ হবে ছয় মাস। তবে যৌক্তিক কারণে রপ্তানির মূল্য দেশে না এলে এর মেয়াদ আরও তিন মাস বাড়ানো যাবে। কোনো ঋণখেলাপি আলোচ্য তহবিল থেকে ঋণ পাবেন না। ঋণ গ্রহীতাদের সার্বিক ঝুঁকি ও সম্ভাবনার বিষয়গুলো ব্যাংক বিশ্লেষণ করে গ্রাহক বাছাই করবে।