বুধবার, ৪ঠা ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

হেলসিঙ্কি থেকে রোববার নিউইয়র্ক যাবেন প্রধানমন্ত্রী

সেরাকণ্ঠ ডট কম :
সেপ্টেম্বর ১৮, ২০২১
news-image

জাতিসঙ্ঘের সাধারণ পরিষদের ৭৬তম অধিবেশন শুরু হয়েছে গত ১৪ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার। এবারের সাধারণ পরিষদের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন নাইজেরিয়ার আবদুল্লাহ শহিদ। এই উচ্চ পর্যায়ের অধিবেশনের সাধারণ বিতর্ক পর্ব শুরু হবে আগামী ২১ সেপ্টেম্বর, চলবে ২৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। এতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইপে এরদোগান, ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সদস্য রাষ্ট্রগুলোর সরকার প্রধান ও তাদের প্রতিনিধরিা বক্তব্য রাখবেন। এ অধিবেশনে যোগদানের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের আগামী ১৯ সেপ্টেম্বর (স্থানীয় সময় রোববার) ফিনল্যান্ডের রাজধানী হেলসিঙ্কি থেকে নিউইয়র্কে পৌঁছার কথা রয়েছে।

প্রধানমন্ত্রীর সফর সঙ্গী হিসেবে রয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মোঃ শাহরিয়ার আলম। তবে অধিবেশনে যোগদানকারী সবাইকে টিকা দেয়া থাকতে হবে বিধায় এবার অধিবেশনে রাষ্ট্রপ্রধানদের উপস্থিতি কম হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এবারের সাধারণ অধিবেশনে গুরুত্ব পাচ্ছে কোভিড ১৯ পরিস্থিতি মোকাবিলা, জলবায়ু পরিবর্তন ও শরনার্থী ইস্যু।

কোভিড ১৯ পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে এ বছর সাধারণ বিতর্কের প্রতিপাদ্য ঠিক করা হয়েছে -“Building resilience through hope-to recover from COVID19, rebuild sustainably, respond to the needs of the planet, respect the rights of people, and revitalize the United Nations”। এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে সাধারণ পরিষদের এবারের অধিবেশনে বিভিন্ন উচ্চ পর্যায়ের সভাগুলো আয়োজন করা হয়েছে।

প্রথমতঃ এবারের অধিবেশনের একটি বড় অংশ জুড়ে থাকবে কোভিড-১৯ মোকাবিলা এবং পরবর্তী টেকসই পুনরুদ্ধার ও পুনঃনির্মাণ। কোভিড-১৯ হতে মুক্তিলাভের জন্য, বিশ্বব্যাপী ‘ভ্যাক্সিন বৈষম্য’ দূরীকরণের বিষয়টি এবারের অধিবেশনে বিশেষভাবে আলোচিত হবে।

দ্বিতীয়তঃ জলবায়ু পরিবর্তনজনিত রেসপন্স ও রিকোভারি কোভিড পরবর্তী টেকসই পুনরুদ্ধারের অন্যতম শর্ত। তাই আসন্ন সাধারণ অধিবেশনে জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়টিও প্রাধান্য পাবে। COP 26 থেকে বিশ্ব যাতে একটি সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা পেতে পারে সে বিষয়েও এবারের সাধারণের পরিষদের অধিবেশনে বিশ্ব নেতৃবৃন্দ আলোচনা করবেন বলে আশা করা যাচ্ছে। ইতোমধ্যে জাতিসঙ্ঘ মহাসচিব ও ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর যৌথ উদ্যোগে জলবায়ু বিষয়ে ভূমিকা পালনকারী দেশগুলোকে নিয়ে একটি সভা আয়োজন করছে।

তৃতীয়তঃ কোভিড-১৯ এর কারণে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ঠ অর্জনে যে অগ্রযাত্রা-তা অনেকাংশেই ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এই ক্ষতি কাটিয়ে উঠে সম্মিলিতভাবে টেকসই বিনির্মাণের বিষয়ে বিশ্ব নেতৃবৃন্দ আলোচনা করবেন। এসডিজি এর প্রতিটি লক্ষ্য ও উদেশ্যকে ভিত্তি করে কোভিড পরবর্তী পুনরুদ্ধারের বিষয়টি তাই এ অধিবেশনে প্রাধান্য পাবে।

২০ সেপ্টেম্বর সোমবার সকাল থেকেই প্রধানমন্ত্রী তার জাতিসঙ্ঘ সফরের কার্যক্রম আনুষ্ঠানিক শুরু করবেন। ওই দিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ও জাতিসঙ্ঘ মহাসচিবের আমন্ত্রণে জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে অংশগ্রহণ করবেন। এই সভায় প্রধানমন্ত্রী জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাংলাদেশ সরকারের গৃহীত বিভিন্ন কার্যক্রম তুলে ধরবেন এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি নিরসনে সম্মিলিত বৈশ্বিক উদ্যোগের আহবান জানানোর কথা রয়েছে। একই দিনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী জাতিসঙ্ঘ সদর দফতর চত্বরে বৃক্ষরোপন করবেন বলে জাতিসঙ্ঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী মিশন এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে নিশ্চিত করেন।

২২ সেপ্টেম্বর ২০২১ প্রধানমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্র আয়োজিত ‘White House Global Covid-19 Summit: Ending the pandemic and building back better’ শীর্ষক এক উচ্চ পর্যায়ের সভায় বক্তব্য প্রদান করবেন। একই দিনে প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ কর্তৃক আয়োজিত ‘Rohingya crisis: Imperatives for a sustainable solution’ শীর্ষক একটি উচ্চ পর্যায়ের সাইড ইভেন্টে অংশগ্রহণ করার কথা আছে।

২৩ সেপ্টেম্বর ২০২১ তারিখে UN Food Systems Summit শীর্ষক উচ্চ-পর্যায়ের সভায় প্রধানমন্ত্রীর যোগ দেয়ার কথা রয়েছে। একই দিনে UN Common Agenda: Action to achieve Equality and Inclusion শীর্ষক একটি উচ্চপর্যায়ের সাইড-ইভেন্টে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্য দেয়ার কথা রয়েছে।

২৪ সেপ্টেম্বর শুক্র্রবার প্রধানমন্ত্রী জাতিসঙ্ঘ সাধারণ পরিষদের সাধারণ বিতর্ক পর্বে বাংলাদেশের পক্ষে বক্তব্য রাখবেন। প্রতিবারের মত এবারো প্রধানমন্ত্রী বাংলায় বক্তব্য দেবেন। তিনি বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রা, আর্থসামাজিক ক্ষেত্রে অর্জন এবং স্বাস্থ্যখাতের সাফল্য সম্পর্কে আলোকপাত করবেন। পাশাপাশি, বিশ্বশান্তি, নিরাপদ অভিবাসন, করোনাভাইরাসের টিকার ন্যায্যতাভিত্তিক বন্টন, বৃহৎ পরিসরে করোনা ভ্যাক্সিন উৎপাদনের লক্ষ্যে পেটেন্টসহ মেধাস্বত্ব উন্মুক্তকরণ, ফিলিস্তিনি ও বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমার নাগরিক সঙ্কট, জলবায়ু ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা সম্পর্কিত বিষয়সমূহ তার বক্তব্যে উঠে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।

প্রতি বছরের মত এবারো যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের দেয়া এক ভার্চুয়াল অভ্যর্থনা সভায় যোগ দেবেন প্রধানমন্ত্রী। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী প্রতিবারের ন্যয় বেশ কয়েকটি দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে অংশগ্রহণ করবেন বলে আশা করা যাচ্ছে। মালদ্বীপের রাষ্ট্রপতি ইব্রাহিম মোহামেদ সলিহ, ভিয়েতনামের রাষ্ট্রপতি নিগুয়েন জুয়ান ফু, বার্বাডোজের প্রধানমন্ত্রী মিয়া আমোর মোটেলি, ইউরোপীয়ান কাউন্সিলের সভাপতি চার্লস মাইকেলসহ বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র /সরকার প্রধানগণের সাথে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে অংশ নিয়ে পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করবেন বলে আশা করা যাচ্ছে। এছাড়া তিনি জাতিসঙ্ঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের সাথেও দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করবেন বলে জানা গেছে।

এছাড়া প্রতিবারের মতো প্রধানমন্ত্রী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের আয়োজনে একটি গোল টেবিল বৈঠকে অংশগ্রহণ করবেন। এই বৈঠকে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীগণ বাংলাদেশে বিনিয়োগ পরিবেশ ও সুযোগ সুবিধার বিষয় সমূহ তুলে ধরবেন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীগণ তাদের বিনিয়োগ প্রস্তাব বাংলাদেশের নিকট তুলে ধরবেন।