নলকূপ থেকে একাই উঠছে পানি, গোপন রোগসহ ব্যাধি সারাতে মানুষের ভিড়
নলকূপের পানি পান করলেই মিলবে রোগমুক্তি! সারবে দুরারোগ্য ব্যাধি ক্যান্সারসহ নানা ধরনের জটিল ও গোপন রোগ। এমন গুজব ছড়িয়ে পড়ার পরই দূর-দূরান্ত থেকে পানি নিতে শত শত মানুষ ভিড় করছে মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার ভবানীপুর গ্রামের আনারুলের বাড়িতে।
চারদিন ধরে ওই বাড়ির টিউবওয়েলে কোনো বৈদুতিক মোটর বা হাতের চাপ ছাড়াই পানি উঠছে। এ পানি পান করে কারো রোগমুক্তি হয়েছে কিনা কেউ বলতে পারেনি।এটিকে পুঁজি করে ব্যবসার ফন্দিও আটছে একটি চক্র। প্রশাসন বলছে, যদি কেউ প্রতারণা করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
জানা গেছে, ভবানীপুর গ্রামের আনারুল ফকিরের বাড়ির টিউবওয়েল দিয়ে হঠাৎ পানি উঠতে থাকে। এলাকার লোকজন এটিকে আল্লাহর নিয়ামত মনে করে এর পানি পান করলে রোগমুক্তি হবে ভেবে পানি নেয়া শুরু করেন। অনেকেই রোগমুক্তির প্রচারণা চালানোর পর ভবানীপুর ও আশপাশের এলাকার লোকজন পানি নিতে ভিড় জমাচ্ছেন ওই বাড়িতে।
কেউ আসছেন গোপন রোগ ভালো করতে। আবার অনেকেই আসছেন ক্যান্সারসহ দূরারোগ্য রোগ থেকে মুক্তি পেতে। বিশেষ করে শুক্রবার বিকেল থেকে পানি নেয়ার জন্য ভিড় লক্ষ্য করা গেছে।শুক্রবার বিকেলে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বিভিন্ন বয়সী নারী-পুরুষের ভিড়। কেউ পানি নিয়ে যাচ্ছেন। আবার কেউ ওখানেই নিয়ত করে পানি পান করছেন।
পানি নিতে আসা কুষ্টিয়ার দৌলতপুরের গরুড়া গ্রামের মহিদুল জানান, তার ও তার ছোট ভাইয়ের গোপন রোগ মুক্তির জন্য পানি নিতে এসেছেন। ডাক্তার কবিরাজের কাছে চিকিৎসা নিয়েও তা ভালো হয়নি।
ভবানীপুরের হাবিবুর জানান, চোখে কম দেখেন তিনি। ওই পানি দিয়ে চোখ পরিষ্কার করলে ভালো হবে মনে করে খাস নিয়তে তিনি পানি নিয়ে যাচ্ছেন। কাউকে কোনো টাকা দিতে হচ্ছে না।গোয়াল গ্রামের বৃদ্ধা চম্পা এসেছেন তার মেয়ের বন্ধ্যাত্ব দূর করতে। বিয়ের ১০ বছর পার হলেও তার মেয়ের কোনো সন্তান নেই।
এদিকে একটি চক্র ওই টিউবওয়েলটিকে ঘিরে ব্যবসার ফন্দি আটছে। অনেকেই এটিকে অলৌকিক বলে দাবি করে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করছেন। তাদের দাবি, পানি পান করলে রোগ ভালো হবে। পানির অপর নাম জীবন। অনেকের রোগ ভালো হয়েছে বলে দাবি করলেও কোনো লোককে দেখাতে পারেননি তারা।
মেহেরপুর হোটেল বাজার জামে মসজিদের ইমাম সিদ্দিকুর রহমান জানান, এসব কুসংস্কার। রোগব্যাধি ভালো করার জন্য মানুষ ডাক্তারের কাছে চিকিৎসা নেবে। পানি পান করলে কোনো রোগ ভালো হয় কিনা সেটি তার অজানা।
মেহেরপুর সিভিল সার্জন ডা. নাসির উদ্দিন জানান, আমরা ঘটনাটি জেনেছি। এটির সঙ্গে বৈজ্ঞানিক কোনো ভিত্তি নেই। নলকূপের পানিতে রোগমুক্তি হয় এমন তথ্য চিকিৎসা বিজ্ঞানে নেই। যারা পানি নিচ্ছে বা পান করছে তারা গুজবে কান দিয়ে সেখানে ভিড় করছে বলেই আমরা মনে করি।
গাংনী থানার ওসি ওবাইদুর রহমান জানান, ওই স্থানে যাতে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে সেজন্য নজরদারিতে রাখা হয়েছে। পুলিশ ক্যাম্পে জানানো হয়েছে ও সতর্ক করা হয়েছে।গাংনী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সেলিম শাহনেওয়াজ জানান, ওই টিউবওয়েলের পানিতে রোগ সারবে কীভাবে তা বোধগম্য নয়। এটি প্রতারণার ফাঁদ মাত্র। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলীকে জানানো হবে এবং টিউবওয়েলটি বন্ধ করে দেয়া হবে।