বিপৎসীমার উপরে তিস্তার পানি
উজানের পাহাড়ি ঢল ও ভারী বর্ষণে তিস্তার পানি ফের বিপৎসীমার ১৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে লালমনিরহাটের তিস্তা তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল আবারও বন্যায় প্লাবিত হয়ে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় দুই হাজার পরিবার।
শুক্রবার (১০ জুলাই) বিকেল ৩টায় দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার তিস্তা ব্যারাজ ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫২ দশমিক ৭৫ সেন্টিমিটার। যা বিপৎসীমার ১৫ সেন্টিমিটার (স্বাভাবিক ৫২ দশমিক ৬০ সেন্টিমিটার) ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এর আগে, শুক্রবার (১০ জুলাই) সকাল ৯টা থেকে হঠাৎ বাড়তে থাকে তিস্তার পানি প্রবাহ। যা ক্রমেই বৃদ্ধি পেয়ে দুপুর ১২টার দিকে বিপৎসীমা অতিক্রম করে প্রবাহিত হয়। ফলে ব্যারাজ রক্ষার্থে তিস্তা নদীর মূলস্রোত ধারার সবগুলো জলকপাট খুলে পানি প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে।
স্থানীয়রা জানান, উজানের পাহাড়ি ঢল ও ভারী বর্ষণে তিস্তা নদীর পানি প্রবাহ বৃদ্ধি পেয়েছে। তিস্তা নদীর ডালিয়া পয়েন্টে পানি প্রবাহ বিপৎসীমার ১৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে জেলার পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রাম, হাতীবান্ধার সানিয়াজান, গড্ডিমারী, সিন্দুর্না, পাটিকাপাড়া, সিংগিমারী, কালীগঞ্জ উপজেলার ভোটমারী, কাকিনা, আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা, পলাশী, সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ, রাজপুর, গোকুণ্ডা, ইউনিয়নের তিস্তা নদীর তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলের প্রায় দুই হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
এদিকে চতুর্থ দফায় তিস্তা নদীতে পানি বৃদ্ধি দেখে তিস্তাপাড়ের মানুষ বড় কোনো বন্যার শঙ্কায় শ্বঙ্কিত তিস্তাপাড়ের মানুষ। করোনা দুর্যোগের সঙ্গে যুক্ত হওয়া বন্যা নিয়ে চরম দুর্ভোগে পড়েছে জেলার নদী তীরবর্তি মানুষ। আসন্ন ঈদুল আজাহার প্রস্তুতি লগ্ন চতুর্থ দফায় বন্যার আশঙ্কা দেখা দেওয়ায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন চরাঞ্চলের ছিন্নমুল মানুষগুলো। টানা চার সপ্তাহ ধরে সপ্তাহের শেষে দুই-তিন দিন বন্যার কবলে পড়ছে লালমনিরহাটের তিস্তাপাড়ের মানুষ। পলি ও বালু জমে তিস্তা ভরাট হওয়ায় সামান্যতেই তিস্তার পানি প্রবাহ লোকালয়ে প্রবাহিত হয়ে বন্যার সৃষ্টি করে। পানি প্রবাহ কমে এলে তীব্র ভাঙনের মুখে পড়ে তিস্তাপাড়ের মানুষ। তাই নদী খনন করে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
তবে তিস্তায় পানি প্রবাহ বৃদ্ধি পাওয়ায় সৃষ্ট বন্যায় চরাঞ্চলের আমন বীজতলা, সবজি, বাদাম ও ভুট্টাসহ ফসলের ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করছেন চাষিরা। অনেক মৎস্য খামারের মাছ পানিতে ভেসে গেছে। অনেকের ফসলের ক্ষেত বন্যার পানিতে ডুবে গিয়ে ফসলহানীর শঙ্কায় চিন্তিত কৃষকরা। তিস্তার তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলের পানিবন্দি পরিবারগুলো শিশু বৃদ্ধ ও গবাদি পশুপাখি নিয়ে পড়েছেন বিপাকে।
হাতীবান্ধা উপজেলার পাটিকাপাড়া ইউনিয়নের চর হলদিবাড়ী গ্রামের আব্দুল ও রহিম উদ্দিন জানান, শুক্রবার সকাল থেকে একটু একটু করে তিস্তার পানি বৃদ্ধি পেয়ে আবারো বন্যায় ডুবেছে তাদের গ্রাম। টানা এক মাস ধরে থেমে থেমে বন্যা আসছে। মুক্তি হতে না হতেই আবারও পানিবন্দি হয়ে পড়ছি। প্রচণ্ড বেগে ধেয়ে আসছে তিস্তার ঘোলা পানি।
হাতীবান্ধা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) ফেরদৌস আলম বলেন, এ উপজেলার ছয়টি ইউনিয়ন তিস্তার বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়। গত বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ অব্যহত রয়েছে। এরই মধ্যে তারা আবারও কিছু মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়ার নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম বলেন, উজানের পাহাড়ি ঢলে তিস্তার পানি প্রবাহ শুক্রবার সকাল থেকে বাড়তে থাকে। দুপুর ১২টার দিকে বিপৎসীমার ৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও তিন ঘণ্টা পর বিকেল ৩টার দিকে বেড়ে গিয়ে বিপৎসীমার ১৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ব্যারাজ রক্ষার্থে সবগুলো জলকপাট খুলে দেওয়া হয়েছে। তবে ভারতে পানি প্রবাহের উপর নির্ভর করবে বন্যা কতটুকু স্থায়ী হবে।