ডিআইজি মিজানকে দুদক কেন গ্রেফতার করছে না: সুপ্রিম কোর্ট
পুলিশের উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মিজানুর রহমান কি দুদকের চাইতে শক্তিশালী, তাকে কেন গ্রেফতার করা হচ্ছে না বলে দুদকের আইনজীবীর কাছে জানতে চেয়েছেন হাইকোর্টের আপিল বিভাগ।
একই সঙ্গে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) এক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ দেশের জন্য অ্যালার্মিং বলেও মন্তব্য করেছে আপিল বিভাগ।
রবিবার (১৬ জুন) দুদকের মামলায় হলমার্ক গ্রুপের চেয়ারম্যান জেসমিন ইসলামকে হাইকোর্টের দেয়া জামিনের বিরুদ্ধে করা আপিলের শুনানিতে এসব কথা বলেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। এ সময় জেসমিনের জামিনও বাতিল করেন আদালত। দুদকের আইনজীবী খুরশিদ আলম খান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
অবৈধভাবে সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তদন্তে থাকা পুলিশের উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মিজানুর রহমানের বিষয়ে প্রশ্ন তুলে আপিল বিভাগ বলেন, ‘ডিআইজি মিজানকে এখনো গ্রেফতার করছেন না কেন? সে কি দুদকের চেয়েও বেশি শক্তিশালী?’
এর পরিপ্রেক্ষিতে দুদকের আইনজীবী বলেন, ‘তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তন হয়েছে। আদালত বলেন, ‘দুদক কর্মকর্তা দুর্নীতিতে জড়িত হওয়ার বিষয়টি দেশের জন্য অ্যালার্মিং।’
আদালত বলেন, ব্যাংক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, আবার ওই টাকার বিপরীতে বন্ধকীকৃত সম্পত্তি ছাড়িয়ে নিতে হাইকোর্টে রিট করছেন। এসব নিয়ে ভাবার সময় এসেছে। শুনানিতে দুদকের আইনজীবী বলেন, জেসমিন ইসলাম হলমার্ক গ্রুপের চেয়ারম্যান পদে থাকাকালে প্রায় ৮৬ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেন। তদন্ত শেষ না হওয়ায় হাইকোর্ট তাকে জামিন দিয়েছেন, এটা কোনো জামিন মঞ্জুরের কারণ হতে পারে না।
এ সময় আপিল বিভাগ জেসমিন ইসলামের জামিন বাতিল করে নিম্ন আদালতে চার সপ্তাহের মধ্যে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেন। দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম বলেন, ‘হলমার্কের চেয়ারপারসন জেসমিন ইসলামকে হাইকোর্টের দেয়া জামিনের বিরুদ্ধে আমরা লিভ টু আপিল করেছিলাম। আজকে শুনানির সময় আপিল বিভাগ হাইকোর্টের রায় বাতিল করে দিয়েছেন। জামিন বাতিল করে তাকে চার সপ্তাহের মধ্যে নিম্ন আদালতে সারেন্ডার করার জন্য নির্দেশ দিলেন।’
তিনি বলেন, ‘এ মামলার শুনানিকালে আদালত আমাকে বেশ কিছু প্রশ্ন জিজ্ঞেস করেছে। আদালত বলেছে- আপনাদের (দুদক) একজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ এসেছে। এটা তো অ্যালার্মিং দেশের জন্য। আমি বলেছি-তার বিরুদ্ধে পিউনেটিভ অ্যাকশন নেয়া হয়েছে।’
পরিপ্রেক্ষিতে আদালত বলেন ‘কিসের পিউনেটিভ অ্যাকশন নিয়েছেন? আপনি শৃঙ্খলা ভঙ্গ আর তথ্য পাচারের জন্য অ্যাকশন নিয়েছেন, ঘুষের কোনো অ্যালিগেশন আপনি নেননি, অ্যাকশন নেননি। কোনো কিছু করেননি।’
এছাড়া আদালত বলেন, আমি বলেছি-ঘুষের জন্য নিতে হলে আমাকে একটু অনুসন্ধান করতে হবে। অনুসন্ধান করে আমাকে এফআইআর দায়ের করতে হবে। আইনের বাইরে তো আমি কোনো কিছু করতে পারব না। আদালত বলেন, ডিআইজি মিজান কি দুদকের চাইতে বড়? তাকে তো আপনি অ্যারেস্ট করতে পারছেন না। হ্যাঁ তাকে কেন অ্যারেস্ট করছেন না? এই মামলায় তাকে কেন আপনি (দুদক) অ্যারেস্ট করছেন না?’
‘আমি বলেছি -আমার যে লোক (দুদকের কর্মকর্তা) আমি তাকে সাসপেন্ড করেছি। আর যে মামলায় তার (ডিআইজি মিজানুর রহমান) অ্যারেস্ট হওয়ার কথা সে মামলাতে অলরেডি চার্জশিট মেমো অব অ্যাভিডেন্স দেয়া হয়েছে এবং যিনি তদন্তকারী কর্মকর্তা তাকে নিয়ে একটা সমস্যা দেখা দিয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে দুদক একটা অ্যাকশন নিয়েছে। তদন্তকারী কর্মকর্তা পরিবর্তন করে নতুন একজনকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। সে নতুনভাবে কাজ শুরু করেছে। বিষয়টি অত্যন্ত আইনানুগভাবে গুরুত্বসহকারে দুদক দেখছে। কোনো ব্যত্যয় ঘটবে না।
উল্লেখ্য, পুলিশ সদর দফতরে সংযুক্ত ডিআইজি মিজানের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনসহ বেশ কিছু অভিযোগে দুদকের পক্ষ থেকে অনুসন্ধান করছিলেন খন্দকার এনামুল বাছির। সেই অনুসন্ধান চলার মধ্যেই ডিআইজি মিজান দাবি করেন, তার কাছ থেকে ৪০ লাখ টাকা ঘুষ নিয়েছেন দুদক কর্মকর্তা বাছির। এ বিষয়ে ডিআইজি মিজান দুদক পরিচালক এনামুল বাছিরের সঙ্গে ঘুষ সংক্রান্ত অডিও ফাঁস করেন।
এছাড়া দ্বিতীয় বিয়ে গোপন করতে নিজের ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ আছে ডিআইজি মিজানের বিরুদ্ধে। দ্বিতীয় স্ত্রী মরিয়ম আক্তারকে প্রভাব খাটিয়ে গ্রেফতার এবং এক সংবাদ পাঠিকা ও এক নারী রিপোর্টারকে যৌন হয়রানির অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। পুলিশের নিয়োগ, বদলিতেও একসময় ভূমিকা রাখতেন তিনি। গ্রেফতার ও মামলা দিয়ে হয়রানি করে টাকা আদায়ের অভিযোগও আছে এ পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।