যেভাবে এলো শবে কদর সন্ধানের রীতি
কুরআন নাজিলের মাস রমজান। এ মাসের এক পবিত্র ও মর্যাদার রাতে আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনুল কারিম নাজিল করেছেন। যাতে মানুষ সঠিক পথ ও মতাদর্শে নিজেদের পরিচালিত করতে পারে।
এ কারণেই রমজান হেদায়েত লাভের মাস। আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের মাস। দুনিয়া ও পরকালের সফলতা লাভের মাস। রহমত বরকত লাভের মাস। মাগফেরাত ও নাজাত লাভের মাস। এ মাস সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন-
‘রমজান হলো সেই মাস, যাতে নাজিল হয়েছে আল-কুরআন। যা মানুষের জন্য হেদায়েত এবং সঠিক পথের যাত্রীদের জন্য সুস্পষ্ট পথ নির্দেশক এবং (ন্যায় ও অন্যায়ের) পার্থক্য বিধানকারী।’
রমজান মাসে আল্লাহ তাআলা বান্দার জন্য রেখেছেন সেরা পুরস্কার। যে পুরস্কার অন্য কোনো জাতির জন্য নাজিল করা হয়নি। আর তাহলো পবিত্র লাইলাতুল কদর অর্থাৎ কররের রাত। এ রাতে ইবাদত হাজার মাসের সমান। কারণ এ রাতেই নাজিল হয়েছে পবিত্র কুরআনুল কারিম।
এ রাতের মর্যাদা বর্ণনায় আল্লাহ তাআলা পুরো একটি সুরা নাজিল করেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন-
‘নিশ্চয়ই আমি একে নাজিল করেছি শবে কদরে। (হে রাসুল!) শবে কদর সম্পর্কে আপনি জানেন কি? শবে কদর হলো এক হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। এতে (এ রাতে) প্রত্যেক কাজের জন্য ফেরেশতাগণ ও রূহ (জিবরিল আমিন) তার পালনকর্তার নির্দেশে অবতীর্ণ হয়। এটা নিরাপদ, শান্তি। যা ফজর হওয়ার সময় পর্যন্ত অব্যাহত থাকে।’ (সুরা কদর)
পুরো রমজান মাসের মধ্যে একটি রাত মাত্র শবে কদর। কিন্তু এ শবে কদর কোন দিন? মানুষ কীভাবে পাবে শবে কদরের সন্ধান? শবে কদর লাভে বিশ্বনবির সেই রীতি ও নসিহতই বা কী?
যেহেতু লাইলাতুল কদর কবে হবে সে ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কোনো দিনক্ষণ উল্লেখ নেই। তবে লাইলাতুল কদর পাওয়ার চেষ্টায় প্রিয়নবি করেছেন আপ্রাণ চেষ্টা সাধনা করেছেন, বসেছেন ইতেকাফে। শবে কদর লাভে বিশ্বনবি যে রীতি অনুসরণ করেছেন। তাহলো-
হজরত আবু সাঈদ খুদরি রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন-
> আমি কদরের রাত পেতে (রমজানের) প্রথম দশদিন ইতেকাফ করলাম।
> এরপর (রমজানের) মধ্যবর্তী দশদিন ইতেকাফ করলাম।
অতপর ওহির মাধ্যমে আমাকে জানানো হল যে-
> তা (শবে কদর রমজানের) শেষ দশ দিনে (নিহিত)।
সুতরাং তোমাদের যে ইতেকাফ পছন্দ করবে, সে যেন (রমজানের শেষ দশকে) ইতেকাফ করে। ফলে, মানুষ তার সঙ্গে ইতেকাফ করলো।’ (মুসলিম)
এ কারণে প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মৃত্যুর আগ পর্যন্ত প্রত্যেক রমজানের শেষ দশকে ইতেকাফ করতেন। হাদিসে এসেছে- হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত শেষ দশ দিন ইতেকাফ করেছেন।’ (বুখারি)
হাদিসের আলোকে বুঝা যায় যে, রমজানের শেষ দশকেই লাইলাতুল কদর নিহিত। সুতরাং লাইলাতুল কদর লাভে রমজানের শেষ দশকে তা সন্ধান করা। রাত জেগে ইবাদত-বন্দেগি করা।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে ইতেকাফ ও লাইলাতুল কদর লাভে আজীবন চেষ্টা সাধনায় আত্মনিয়োগ করার তাওফিক দান করুন। বিশেষ করে রমজানের শেষ দশকে ইতেকাফ পালনের মাধ্যমে লাইলাতুল কদর লাভের পাশাপাশি দুই হজ ও দুই ওমরা লাভের তাওফিক দান করুন। আমিন।