বৃহস্পতিবার, ২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

৫২ ভেজাল পণ্যের বিষয়ে সরকার কী করছে : প্রশ্ন হাইকোর্টের

সেরাকণ্ঠ ডট কম :
মে ১০, ২০১৯
news-image

বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের (বিএসটিআই) ল্যাবে পরীক্ষায় অনুত্তীর্ণ ৫২টি মানহীন পণ্য বাজার থেকে প্রত্যাহার এবং এসব পণ্য উৎপাদন ও বাজারজাত বন্ধের নির্দেশনা চেয়ে উচ্চ আদালতে রিট করেছে কনসাস কনজুমার্স সোসাইটি (সিসিএস)।

বৃহস্পতিবার (৯ মে) ভোক্তা অধিকার সংস্থা ‘কনসাস কনজুমার্স সোসাইটির’ (সিসিএস) পক্ষে উচ্চ আদালতের সংশ্লিষ্ট শাখায় আবেদনটি করেন প্রতিষ্ঠানটির আইন উপদেষ্টা ও সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার শিহাব উদ্দিন খান।

রিট আবেদনের সঙ্গে বিএসটিআই কর্তৃক প্রকাশিত ভেজাল ৫২টি পণ্যের তালিকা সংযুক্ত করা হয়েছে। পণ্যের গুণগতমান বিএসটিআই কর্তৃক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ না হওয়া পর্যন্ত ৫২টি পণ্যের উৎপাদন বন্ধের নির্দেশনাও চাওয়া হয়েছে রিটে।

ভোক্তা অধিকার সংস্থা সিসিএস’র রিটে সরকারের খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব, বিএসটিআইয়ের মহাপরিচালক, বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান ও জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের মহাপরিচালককে বিবাদী করা হয়েছে।

রিটের শুনানির শুরুতে রিটকারী আইনজীবী ব্যারিস্টার শিহাব আদালতের উদ্দেশে বলেন, আমি, আপনি (বিচারপতিগণ) ও আমাদের শিশুরা ভেজাল খাদ্যপণ্য গ্রহণ করছে। বিএসটিআই প্রেস ব্রিফিং করে এসব ভেজাল পণ্যের তথ্য তুলে ধরলেও, তারা পণ্যগুলো এখনও জব্দ করেনি।

রিটকারী আইনজীবীর এ কথার প্রেক্ষিতে আদালত বলেন, এসবের মধ্যে কমন পণ্য কি কি রয়েছে? রুপচাঁদা ও তীরের সয়াবিন তেলসহ অনেক নামি-দামি ব্র্যান্ডের পণ্য আছে দেখছি! প্রাণ, ফ্রেশের হলুদের গুঁড়াতেও ভেজাল, তাহলে আমরা কোথায় আছি?

এ পর্যায়ে ব্যারিস্টার শিহাব প্রশ্ন করেন, আমাদের শিশুরাও এসব খাদ্যপণ্য গ্রহণ করছে, আমরা তাহলে কী করব?

ভেজাল পণ্য রোধ করা বা জব্দ করার কাজ সরকারের উল্লেখ করে আদালত বলেন, এগুলো তাদের দেখা উচিত। আমরা সাধারণ মানুষের মামলা দেখব, নাকি এসব মামলা দেখব? ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল কোথায়?

এ পর্যায়ে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোখলেছুর রহমান শুনানির জন্য দাঁড়ালে আদালত তার উদ্দেশে প্রশ্ন করেন, কী ব্যাপার? প্রতিদিন এসব ভেজাল ও নিম্নমানের পণ্য নিয়ে আদালতে মামলা আসছে। সরকার কী করছে? বিশেষ ক্ষমতা আইনে এসব বিষয়ে সাজার বিধান নেই? উত্তরে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, সর্বোচ্চ শাস্তির বিধান রয়েছে।

বিএসটিআইয়ের অনুত্তীর্ণ তালিকায় রূপচাঁদা, তীরের মতো ব্র্যান্ডের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের নাম আসছে, বিএসটিআই শুধু শোকজ করেছে মন্তব্য করে আদালত বলেন, ভেজাল নির্ণয়ের সঙ্গে সঙ্গে বাজার থেকে পণ্যগুলো তুলে নেয়া উচিত ছিল, এটাই নিয়ম। আমরা কি দেশ চালাই? কোর্ট কি দেশ চালায়? এটা সরকারের কাজ। তবুও এসব কীভাবে হয়? অথচ আমরা (আদালত) আদেশ দেই আর আমাদের সেই আদেশের সমালোচনা করা হয়। তাহলে এ মামলায় কাদেরকে তলব করা যায়?

রিটকারী ব্যারিস্টার শিহাব আদালতকে বলেন, বিএসটিআইয়ের মহাপরিচালককে বিষয়টির জন্য তলব করা যেতে পারে। তখন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ডেপুটি পদস্থ কাউকে তলব করা যেতে পারে।

এরপর বিএসটিআই ও বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য অধিদফতরের ডেপুটি ডিরেক্টরের নিচে নয় এমন পদস্থ কর্মকর্তাদের কোর্টে আসতে বলে আদালত বলেন, এভাবে চলা যায় না। এই ব্র্যান্ডগুলো দেশ ছাড়াও বিদেশে রফতানি হচ্ছে। প্রাণ লাচ্ছা সেমাইতেও ভেজাল। তারা (বিএসটিআই ও নিরাপদ খাদ্য অধিদফতরের কর্মকর্তারা) কী করছেন? দেশে ভোক্তা অধিকার আইন রয়েছে। তা সত্ত্বেও কেন আমাদের (হাইকোর্টে) কাছে আসতে হবে? সেখানে কেন যাওয়া হয় না? ঠিক আছে, ওই দুই কর্মকর্তাকে তলব করা হোক এবং আমরা এ বিষয়ে আগামী রবিবার মামলাটি আদেশের জন্য রাখছি।