নির্বাচনে যেতে বিএনপির ৬ শর্ত
আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে ৬ টি শর্ত দিয়েছে বিএনপি। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলের সব স্থায়ী কমিটির নেতার বক্তব্যে বারবার এই শর্তগুলো এসেছে। এরমধ্যে নির্বাচনের প্রধান শর্ত হচ্ছে নির্বাচনের আগে দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ সব বন্দিদের নিঃশর্ত মুক্তিসহ সব মামলা প্রত্যাহার করা।
শনিবার (১ সেপ্টেম্বর) বিকালে বিএনপির ৪০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত জনসমাবেশে দলটির সিনিয়র নেতারা এসব শর্ত দেন সরকারকে।
জনসভায় সভাপতির বক্তব্যে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন,খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই, তার নামে দেওয়া সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। একাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে। সংসদ ভেঙে দিতে হবে। নির্বাচনের আগে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে হবে। নির্বাচনে আগে সেনাবাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দিতে হবে, বর্তমান নির্বাচন কমিশনকে পুনর্গঠন করতে হবে।
উল্লেখ্য, এর আগেও কয়েকবার এই শর্তগুলো বিএনপির নেতাদের বক্তব্যে উচ্চারিত হয়েছে।
এর আগে শনিবার সকাল সাড়ে ১১টা থেকে রাজধানীসহ আশপাশের জেলাগুলো থেকে দলটির নেতাকর্মীরা দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে ব্যানার, ফেস্টুন, প্ল্যাকার্ডসহ ছোট ছোট মিছিল নিয়ে নয়াপল্টন সমাবেশ স্থলে আসতে শুরু করেন। দুপুর আড়াইটায় নয়াপল্টন অস্থায়ী মঞ্চে বিএনপির জনসভায় শুরু হয়।
জনসভায় উপস্থিত নেতাকর্মীদের উদ্দেশ করে মির্জা ফখরুল বলেন, বুকে সাহস,বল নিয়ে আমাদের ঘুরে দাঁড়াতে হবে। আমরা আর বেগম জিয়াকে কারাগারে দেখতে চাই না। আন্দোলনের মাধ্যমে তাকে মুক্ত করে আনা হবে।
আওয়ামী লীগকে ইতিহাস আর রক্ষা করতে পারবে না উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, তারা জানে জনগণ আর তাদেরকে রক্ষা করবে না। কারণ,এদেশের জনগণ আওয়ামী লীগ থেকে দূরে সরে গেছে। এজন্য তারা এখন যন্ত্রের ওপর ভর করে ক্ষমতায় আসতে চায়। এজন্য ইভিএমের (ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন) ওপর ভর করছে।
অবিলম্বে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়ে উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, অন্যথায় এর সব দায়ভার আপনাদের নিতে হবে।
আওয়ামী লীগের নেতারা সবসময় দুঃস্বপ্ন দেখেন বলে মন্তব্য করে তিনি আরও বলেন, ‘আসলো আসলো বিএনপি আসলো, তারেক রহমান আসলো, খালেদা জিয়া আসলো—এই ভয়ে রাতে তাদের ঘুম হয় না। ২৪টা ঘণ্টা শুধু বিএনপি,খালেদা জিয়া,তারেক রহমান ভীতি।এর থেকে বাঁচার জন্য কতো রকমের কারসাজি যে তারা করছে।’
আওয়ামী লীগ নতুন করে বিএনপির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে বলেও অভিযোগ করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন,‘সরকারের এক মন্ত্রী আগেই বলে দিচ্ছেন ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মামলায় তারেক রহমানের সাজা হবে। আপনারা কি বিচারকের দায়িত্ব নিয়েছেন? তদন্ত করেছেন ঠিকমতো?’
তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘তারা (আওয়ামী লীগ) ইচ্ছাকৃতভাবে এই তদন্তকে প্রভাবিত করেছে। তিনজন আইও পরিবর্তন করার পর কেয়ারটেকার সরকারের আইও ও তদন্তের পর আওয়ামী লীগ সরকার আসার পর নতুন করে তদন্ত করেছেন। সেই তদন্তে মুফতি হান্নানের মিথ্যা জবানবন্দি নিয়ে তারেক রহমানকে আসামি করেছেন। পরিষ্কার করে বলতে চাই,এই ধরনের ষড়যন্ত্রের রায় বাংলাদেশের মানুষ কখনও মেনে নেবে না।’
দলটির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর এ জনসভায় উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড.খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান, ডা এ জেড এম জাহিদ হোসেন, শামসুজ্জামান দুদু, আহমেদ আযম খান, বরকত উল্লা বুলু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, জয়নাল আবেদীন, মশিউর রহমান, ফজলুল রহমান, আবুল খায়ের ভূইয়া, আব্দুস সালাম, আতাউর রহমান ঢালী, হাবিবুর রহমান হাবিব প্রমুখ।