শুক্রবার, ১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

৬২ কোম্পানির ভ্যাট ফাঁকি ১৫ হাজার কোটি টাকা

সেরাকণ্ঠ ডট কম :
আগস্ট ৩, ২০১৮
news-image

বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর সঙ্গে সঙ্গে দেশীয় কোম্পানিগুলোর রাজস্ব ফাঁকি দেওয়ার প্রবণতা বাড়ছে। সম্প্রতি অনুসন্ধানে কয়েকটি কোম্পানির মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট ফাঁকি উদঘাটিত হয়েছে। তাতে দেখা গেছে মোবাইল কোম্পানি, সরকারি প্রতিষ্ঠান, বেসরকারি শিল্পখাত, ব্যাংক—বীমা, সিমেন্ট প্রভৃতি খাত রয়েছে। এসব খাতের ৬২ কোম্পানির উদঘাটিত ভ্যাট ফাঁকির পরিমাণ ১৫ হাজার ২শ’ কোটি টাকা। এরমধ্যে সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকা এখনো অনাদায়ী।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্র জানায়, ফাঁকি উদঘাটনে নিরীক্ষা কার্যক্রম জোরদার করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বড় আকারের ভ্যাট-ট্যাক্স পরিশোধকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর ভ্যাট অফিসে দাখিল করা কাগজপত্র, প্রতিষ্ঠানে রক্ষিত নথি, শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ঘোষিত আর্থিক বিবরণী কিংবা ব্যাংক ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে প্রদেয় বিবরণী বিস্তারিত যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।

সূত্রমতে, ভ্যাট ফাঁকির প্রবণতা বেড়ে যাওয়ায় রাজস্ব আদায়েও নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। অন্যদিকে, বাড়তি রাজস্ব আয়ের চাপ রয়েছে রাজস্ব প্রশাসনের ওপর। তবে ভ্যাট ফাঁকি উদঘাটনের ঘটনার পর কেউ কেউ উচ্চ আদালতে কিংবা ট্রাইব্যুনালে আপিল করেছে। কোন কোন প্রতিষ্ঠান আংশিক ফেরত দিতে শুরু করেছে। উচ্চ আদালতে চলমান মামলাগুলোর মধ্যে ৪টি মোবাইল কোম্পানির সিম রিপ্লেসমেন্ট ও স্থান, স্থাপনা ভাড়া সংক্রান্ত এবং প্রিমিয়ার ব্যাংকের স্থান, স্থাপনা ও ভাড়া সংক্রান্ত মোট ১১টি মামলায় জড়িত রাজস্ব প্রায় ২ হাজার ৪৩০ কোটি টাকা।

গ্রামীণ ফোনের ভ্যাট ফাঁকি উদঘাটন ১ হাজার ৩৪ কোটি টাকার, রবি ১ হাজার ৫৮৬ কোটি, বাংলা লিংক ৬১৪ কোটি, এয়ারটেলের ৩৯৩ কোটি টাকার। মোবাইল কোম্পানিগুলো আংশিক পরিশোধ করলেও বড় অংকের রাজস্ব পাওনা রয়েছে এবং উচ্চ আদালতে বিচারাধীন।

ভ্যাট খাতে বৃহত্ করদাতা ইউনিটের (এলটিইউ) পরিদর্শনে দেখা যায়, নানা উপায়ে কোম্পানিগুলো ভ্যাট ফাঁকি দিচ্ছে। উপকরণ ও উত্পাদিত পণ্য ভ্যাট রেজিস্টারে আইন ও বিধি অনুযায়ী যথাযথ সংরক্ষণ না করে বাণিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে। এ প্রক্রিয়ায় ভ্যাট ফাঁকি দেয়া কোম্পানি হচ্ছে এএসটি বেভারেজ লিমিটেড। কোম্পানিটির ভ্যাট ফাঁকির পরিমাণ ১৪৭ কোটি ত্রিশ লাখ টাকা। অন্যত্র কোম্পানিটির আরো ২ কোটি ৩৫ লাখ টাকা ফাঁকি রয়েছে। ফুড এন্ড বেভারেজ খাতে ফাঁকির তালিকায় আকিজ ফুড এন্ড বেভারেজও রয়েছে।

সিমেন্ট শিল্প খাতের সিমেক্স সিমেন্টের ১২৯ কোটি ২৫ লাখ টাকা ভ্যাট ফাঁকির তথ্য উদঘাটিত হয়েছে। প্রিমিয়ার সিমেন্ট ৯৫ কোটি ৮১ লাখ, মদিনা সিমেন্ট ২ কোটি টাকা, এমআই সিমেন্ট ৪ কোটি টাকা, মীর সিমেন্ট ৭ কোটি ১৩ লাখ টাকা ফাঁকি দিয়েছে। মদিনা ও এমআই সিমেন্টের কাছ থেকে ফাঁকি দেয়া অর্থ আদায় করেছে এনবিআর। সেভেন সার্কেল বাংলাদেশের ফাঁকি ৭ কোটি টাকা উদঘাটিত হয়েছে।

বেসরকারি খাতের প্রাইম ব্যাংক ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে ৩০ কোটি ৬১ লাখ টাকা। ঢাকা ব্যাংক সাড়ে ৯ কোটি টাকা, সাউথইস্ট ব্যাংক ৫ কোটি টাকা ফাঁকি দিয়েছে। এই তালিকায় আরো রয়েছে ব্যাংক এশিয়া, ডাচ—বাংলা, ইসলামী ব্যাংক, এইচএসবিসি, ন্যাশনাল ব্যাংক। বীমা কোম্পানিগুলোর মধ্যে রয়েছে রূপালী ইন্সুরেন্স, ফিনিক্স, সাধারণ বীমা, গ্রিন ডেল্টা, ইস্টল্যান্ড, রিলায়েন্স, প্রগতি, পাইওনিয়ার প্রভৃতি।

ঢাকা টোব্যাকোর ভ্যাট ফাঁকি প্রায় ১৮ কোটি টাকা। বাটা সু কোম্পানির ফাঁকি উদঘাটিত হয়েছে প্রায় ৯ কোটি টাকার। এই তালিকায় আরো রয়েছে এমএল এরিকসন, ইউনিক হোটেল, ওয়েস্টিন, সিনহা প্রিন্টার্স, গ্লোবাল হেভি কেমিকেলস, ন্যাশনাল পলিমার, চায়না—বাংলা সিরামিকস, লিবরা ইনফিউশন, এপোলো ইস্পাত প্রভৃতি।

সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে তিতাস গ্যাস, কর্ণফুলি গ্যাস, বাখরাবাদ গ্যাস, ডেসকো, পিডিবি, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স, ঢাকা ওয়াসা, বিআরটিসি, ডিপিডিসি প্রভৃতি সংস্থার কাছে পাওনা রয়েছে বিপুল অংকের ভ্যাটের অর্থ।