স্নেহময় আলিঙ্গনে গোটা দুনিয়ার হৃদয়ে ক্রোয়েশিয়ার প্রেসিডেন্ট
রাশিয়া বিশ্বকাপ শেষ হয়ে গেছে। কিন্তু তার রেশ রয়ে গেছে এখনো। হয়তো এটা থাকবে অনেক দিন পর্যন্ত। আলাদা সৌন্দর্য নিয়ে এই বিশ্বকাপ মানুষের মনে যায়গা পাওয়ার পেছনে অন্যতম কারণ হিসাবে থাকবে ক্রোয়েশিয়ার প্রেসিডেন্ট কলিন্দা গ্রাবার-কিতারোভিচ এর উচ্ছ্বলতার জন্য। কারণ বিশ্বকাপ শেষ হওয়ার পর বৃষ্টিতে ভিজে দুই দলের সব খেলোয়াড়কে স্নেহময় আলিঙ্গনে জয় করে নিয়েছেন গোটা দুনিয়ার হৃদয়।
বিশ্বকাপটা ফ্রান্স জিতল নাকি জিতলেন কলিন্দা গ্রাবার-কিতারোভিচ! লুঝনিকির ফাইনালে ফ্রান্সের প্রতিপক্ষ ছিল ক্রোয়েশিয়া, কিন্তু কোটি মানুষের মন জয় করা ক্রোয়াট প্রেসিডেন্ট কিতারোভিচ ছিলেন অপ্রতিদ্বন্দ্বী। এতটাই যে খেলা শেষে বৃষ্টির মধ্যে দাঁড়িয়ে তাঁর একের পর এক খেলোয়াড়দের আলিঙ্গন করার মুহূর্তগুলোকে বলা হচ্ছে ‘বিশ্বকাপেরই সেরা দৃশ্য।’
প্রায় প্রতি ম্যাচেই ক্রোয়েশিয়া দলকে মাঠে থেকে উৎসাহ জুগিয়েছেন। ন্যাটো সম্মেলনে যোগ দিতে ব্রাসেলস যাওয়ায় সেমিফাইনাল মিস করেছেন। ফাইনালে আবারও তার সহাস্য উপস্থিতি। সে হাসি থামেনি ক্রোয়েশিয়া ৪-২ গোলে হেরে যাওয়ার পরও।
ক্রোয়েশিয়ার জার্সি পরে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর সাথে পুরস্কার বিতরণী মঞ্চে আসেন কিতারোভিচ। গলায় পদক পরে একে একে যখন খেলোয়াড়েরা সামনে দিয়ে যাচ্ছিলেন—সবাইকেই কাছে টেনে আলিঙ্গন করেছেন। ফ্রান্সের খেলোয়াড়, রেফারি-লাইন্সম্যানদেরও বাদ দেননি। ক্রোয়াট খেলোয়াড়দের প্রতি বাড়তি আবেগ থাকাটাই ছিল স্বাভাবিক।
এ সময় বৃষ্টি একটু রসিকতা করল। ফাইনাল যখন চলছিল, তখন না এসে সেটি এল কিনা তিন দেশের রাষ্ট্রপ্রধানকে পুরস্কার বিতরণী মঞ্চে রেখে! পুতিনের মাথার ওপর একটু পরেই বেশ কয়েকটি ছাতা মেলে ধরা হলেও কিতারোভিচের সেটির দরকার পড়েনি। বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতেই সৌহার্দ্যের সুবাস ছড়িয়েছেন।
ফাইনাল শেষে ওই দৃশ্য যেন মন ছুঁয়ে গেল সবার। কেউ লিখেছেন, ‘তিনি সমর্থকদের আরও আবেগপ্রবণ করেছেন।’ কারও মন্তব্যটাও হয়েছে আবেগময়, ‘বিশ্বকাপের সেরা দৃশ্য। মাথার ওপর ছাতা নেই…তার মধ্যেই কলিন্দা গ্রাবার-কিতারোভিচ ক্রোয়েশিয়া-ফ্রান্স দুই দলের খেলোয়াড়দেরই একের পর এক আলিঙ্গন করে যাচ্ছিলেন। এখানে ছিল না কোনো রাজনীতি, ছিল শুধুই খেলা।’
প্রেসিডেন্ট কলিন্দা গ্রাবার-কিতারোভিচ
ক্রোয়েশিয়ার প্রেসিডেন্ট কালিন্দা গ্রাবার-কিতারোভিচ ১৯৬৮ সালের ২৯ এপ্রিল সাবেক যুগোস্লাভিয়ার ক্রোয়েশিয়া অংশের রিজেকায় জন্মগ্রহণ করেন।
৫০ বছর বয়সী এই প্রেসিডেন্ট ছাত্র জীবনের প্রথম শুরু দিকেকেই ‘ছাত্র বিনিময় কর্মসূচী’র অংশ হিসাবে নিউ মেক্সিকোর লস অ্যালামস হাই স্কুলে এক বছর কাটিয়ে ছিলেন। পরবর্তীতে কালিন্দা গ্রাবার ভিয়েনা, ওয়াশিংটন ডিসি, জাগরেব এবং হার্ভার্ডে অধ্যয়ন করেছেন। দেশে ফেরার তিন বছর আগে তিনি ডক্টরেট ডিগ্রী পেয়েছেন।
কলিন্দা গ্রাবার ক্রোয়েশিয়া, ইংলিশ, স্পেনিশ এবং পুর্তিগিজ ভাষায় অনর্গল কথা বলতে পারেন। এছাড়া জার্মান, ফ্রান্স এবং ইতালিয়ান ভাষাও কিছু বুঝতে পারেন।
প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলেন যেভাবে
কলিন্দা গ্রাবার ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। তিনি দেশটির চতুর্থ প্রেসিডেন্ট এবং মহিলা হিসাবে প্রথম।
১৯৯৩ সালে তিনি ক্রোয়েশিয়া ডেমোক্রেটিক ইউনিয়নে যোগদান করার পর পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা পথে চাকুরী করেছেন। পড়াশোনার খাতিরে ওয়াশিংটন ডিসি কালিন্দা গ্রাবার বলকান দেশে ফিরে আসেন এবং পার্লামেন্টে যোগদান করেন।
ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট আইভো জোসেপোভিচকে পরাজিত করে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার আগে কলিন্দা গ্রাবার যুক্তরাষ্ট্রে ক্রোয়েশিয়ার রাষ্ট্রদূত হিসাবে দায়িত্বপালন করেছেন। এরআগে তিনি ন্যাটোর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হিসাবেও কাজ করেছেন।
তিনি বিয়ে করেছেন কবে?
কালিন্দা গ্রাবার ১৯৯৬ সালে জকোভ কিটরোভিচকে বিয়ে করেছেন। তাদের দুই সন্তান। এরমাঝে ১৭ বছর বয়সী মেয়ে ক্যাটরিনা এরই মধ্যে স্নাতক সম্মন্ন করেছে। তাদের ছেলে লুকার জন্ম হয়েছে ২০০৩ সালে।