মঙ্গলবার, ১৬ই এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

বাজেটে যেসব জিনিসের দাম বাড়বে-কমবে

সেরাকণ্ঠ ডট কম :
জুন ৮, ২০১৮
news-image

আগামী অর্থবছরের (২০১৮-১৯) জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বেশ কিছু পণ্য ও সেবার ওপর কর বা শুল্কহার বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন। একই সাথে বেশ কিছু পণ্যের আমদানিতে শুল্ক (সিডি), সম্পূরক শুল্ক (এসডি) বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন। এছাড়া কিছু পণ্য ও সেবার স্থানীয় উৎপাদনপর্যায়ে সম্পূরক শুল্ক বাড়ানোর পাশাপাশি আয়করেও পরিবর্তন আনা হয়েছে।

ফলে এসব কারণে বিভিন্ন পণ্যের দাম বেড়ে যেতে পারে। দাম বেড়ে যাওয়ার তালিকায় উল্লেখযোগ্য পণ্যগুলো হলো- পুরনো গাড়ি, বাইসাইকেল, মোবাইল ও ব্যাটারি চার্জার, ইউপিএস ও আইপিএস, ভোল্টেজ স্ট্যাবিলাইজার, ল্যাম্প হোল্ডার, এনার্জি ড্রিংক, পলিথিন ব্যাগ, বিড়ি সিগারেট, প্রসাধনসামগ্রী, শেভিংসামগ্রী, সিরামিকের বাথটাব, মধু, চুইংগাম, সুগার কনফেকশনারি, চকলেট কোকোযুক্ত খাবার, বাদাম, সিরিয়াল, ওটস, চুলের কিপ ও চুল পড়া রোধকসামগ্রী ইত্যাদি।

মোবাইল ফোন : আগামী অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে সরকার দেশে উৎপাদিত মোবাইল ফোনকে উৎসাহিত করতে মোবাইল সেট আমদানিপর্যায়ে ২ শতাংশ সারচার্জ আরোপের প্রস্তাব করেছেন। একই সাথে মোবাইল ব্যাটারির চার্জারের আমদানি শুল্ক ১৫ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। এর ফলে আমদানিকৃত মোবাইল ফোনের দাম বেড়ে যেতে পারে।

চুলের ক্লিপ : আগামী অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে মহিলাদের ব্যবহৃত চুলের কিপ, ও চুল পড়া রোধকসামগ্রীর সম্পূরক শুল্ক শূন্য থেকে বাড়িয়ে ২০ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। ফলে আলোচ্য পণ্যের দাম বেড়ে যেতে পারে।

বাইসাইকেল : আগামী অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে বাইসাইকেল তৈরি সরঞ্জামে আমদানি শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। ফলে বাইসাইকেলের দাম বেড়ে যেতে পারে।

পুরনো গাড়ি : পুরনো গাড়ির আমদানিকে নিরুৎসাহিত করতে আগামী অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে অর্থমন্ত্রী পুরনো গাড়ির অবচয় সুবিধা বছরভিত্তিক ৫ শতাংশ হারে কমানোর প্রস্তাব করেছেন। এতে পুরনো গাড়ির দাম বেড়ে যেতে পারে।

আইপিএস ও ইউপিস : লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ জনগণ সাময়িক দুর্ভোগ লাঘবের জন্য আইপিএস ব্যবহার করেন। কিন্তু আগামী অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে ২০০০ ভোল্ট পর্যন্ত আইপিএস ও ইউপিএস আমদানিতে শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। ফলে আইপিএস ও ইউপিএসের দাম বেড়ে যেতে পারে। এ ছাড়া ভোল্টেজ স্ট্যাবিলাইজার আমদানিতে শুল্ক ১ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ, ল্যাম্প হোল্ডারস আমদানিতে সম্পূরক শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২০ শতাংশ করা হয়েছে। ফলে এসব পণ্যের দামও বেড়ে যেতে পারে।

প্রসাধনীসামগ্রী : আগামী অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে প্রসাধনীসামগ্রী, যেমন : সানস্ক্রিন, পায়ের প্রসাধনসামগ্রীর ওপর ১০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। ফলে এসব পণ্যের দাম বেড়ে যেতে পারে।

সিগারেট, বিড়ি : আগামী অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে সিগারেট পেপার, বিড়ির পেপারের ওপর সম্পূরক শুল্ক ২০ থেকে বাড়িয়ে ২৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। ফলে সিগারেট ও বিড়ির দাম বেড়ে যেতে পারে।

মধু, চুইংগাম, চকলেট : আগামী অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে মধু, চুইংগাম, সুগার কনফেকশনারি, চকলেট কোকোযুক্ত খাবার, বাদাম, সিরিয়াল, ওটস, খুচরা মোড়কে সরাসরি বিক্রির জন্য আমদানিতে শুল্কহার ২৫ শতাংশ বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে। ফলে এসব পণ্যের দাম বেড়ে যেতে পারে।

এছাড়া এনার্জি ড্রিংকের েেত্র সম্পূরক শুল্ক ২৫ থেকে বাড়িয়ে ৩৫ শতাংশ করা হয়েছে। শেভিংসামগ্রী, শরীরের দুর্গন্ধ ও ঘাম দূরীকরণে ব্যবহৃত সামগ্রী (আতর ব্যতীত), সুগন্ধযুক্ত বাথ সল্ট ও অন্যান্য গোসলসামগ্রীতে সম্পূরক শুল্কহার ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে। সিরামিকের বাথটাব, জিকুজি শাওয়ার, শাওয়ার ট্রের সম্পূরক শুল্ক ২০ থেকে বাড়িয়ে ৩০ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। বিদ্যুতের ব্যবহার কমানোর জন্য আলট্রা ভায়োলেট, ফিলামেন্ট ল্যাম্পের ব্যবহার কমানোর জন্য সম্পূরক শুল্ক ১০ শতাংশ করা হয়েছে। পলিথিনের ব্যবহার কমানোর জন্য, পলিথিন ব্যাগ ও প্লাস্টিক ব্যাগ ও মোড়কের ওপর ৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। হাইড্রলিক ব্রেক ফুইড ও হাইড্রলিক ট্রান্সমিশনসহ অন্যান্য পণ্যে আমদানি শুল্ক ১০ থেকে ১৫ করা হয়েছে। একই সাথে কাশ্মীরি ছাগল ও অন্য প্রাণীর লোম থেকে তৈরিসামগ্রীতে ৪৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে। ফলে এসব পণ্যের দাম বেড়ে যেতে পারে।

দাম কমবে

আগামী ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটে বেশ কিছু পণ্যের আমদানি শুল্ক কমানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। অব্যাহতি দেয়া হয়েছে ভ্যাট থেকে। ফলে এসব পণ্যের দাম কমে যেতে পারে। দাম কমতে পারে তেমন উল্লেখযোগ্য পণ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে, গুঁড়া দুধ, ওষুধ, মোটরসাইকেল, কার্বন রড, বিলাসবহুল গাড়ি, কর্নফাওয়ার ইত্যাদি।

ওষুধ শিল্প : আগামী অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে ওষুধ শিল্পের কাঁচামাল আমদানিতে ১০ ধরনের ওষুধের কাঁচামাল আমদানিতে শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশ এবং ১৩১ ধরনের ওষুধের কাঁচামাল আমদানিতে আমদানি শুল্ক ৫ ও শূন্য শতাংশ অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। ক্যান্সার নিরোধক ওষুধ উৎপাদনের জন্য কাঁচামাল আমদানি শুল্কের রেয়াতি সুবিধা প্রদান করা হয়েছে। ফলে ওষুধের দাম কমে যেতে পারে।

বিলাসবহুল গাড়ি : পুরনো গাড়ির দাম বাড়ানো হলেও ধনীদের ব্যবহৃত বিলাসবহুল গাড়ি যেমন, ১৮০০ সিসি পর্যন্ত হাইব্রিড মোটরগাড়ি আমদানিতে সম্পূরক শুল্ক ৪৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। ফলে বিলাসবহুল গাড়ির দাম কমে যেতে পারে।
গুঁড়া দুধ : গুঁড়া দুধ আমদানিতে শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করা হয়েছে। ফলে গুঁড়া দুধের দাম কমে যেতে পারে।

মুদ্রণশিল্প : দেশীয় মুদ্রণশিল্প রক্ষায় মুদ্রণশিল্পের কাঁচামালে শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করা হয়েছে। ফলে মুদ্রণশিল্পে উৎপাদিত পণ্যের দাম কমে যেতে পারে।
পোলট্রি ফিড : পোলট্রি ফিডের প্রয়োজনীয় উপকরণের ওপর শুল্ক প্রত্যাহার করা হয়েছে। এতে পোলট্রি ফিডের দাম কমে যেতে পারে।

টায়ার-টিউব ও মোটরসাইকেল : মোটরসাইকেল উপকরণ আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা প্রদান করা হয়েছে। একই সাথে টায়ার-টিউব উৎপাদনের কাঁচামাল আমদানিতে শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করা হয়েছে। ফলে এসব পণ্যের দাম কমে যেতে পারে।

এ ছাড়া বৈদ্যুতিক সরঞ্জামের মধ্যে কার্বন রডের শুল্ক কমেছে। ফিশিং নেট আমদানিতে শুল্ক প্রণোদনার প্রদানের প্রস্তাব করা হয়েছে। কর্নফাওয়ার ও অ্যালুমিনিয়ামের তার আমদানিতে শুল্ক হ্রাস করা হয়েছে। বল পয়েন্ট কলমের কালি আমদানিপর্যায়ে ভ্যাট প্রত্যাহার করা হয়েছে। ছবি ছাপানোর পণ্যসামগ্রীতে শুল্ক কমানো হয়েছে। ফলে এসব পণ্যের দাম কমে যেতে পারে।