কিম-ট্রাম্প বৈঠক : উ. কোরিয়ার ‘ফাঁদে’ পা দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র
উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের সাথে বৈঠকে বসতে রাজি হওয়ার একদিন পর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প টুইট করে বলেছেন, সেখানে সমঝোতা হওয়ার ব্যাপারে তিনি আশাবাদী।
কিন্তু এর আগে হোয়াইট হাউজ থেকে বলা হচ্ছিলো, উত্তর কোরিয়া তার পরমাণু কর্মসূচি বন্ধ করার ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ না নিলে তাদের মধ্যে কোনো বৈঠক হবে না।
যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ মাধ্যমে বলা হচ্ছে, ওয়াশিংটন প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সাথে আলোচনা না করেই ট্রাম্প উত্তর কোরিয়ার নেতার সাথে বৈঠকের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো প্রেসিডেন্টই উত্তর কোরিয়ার নেতার সাথে সাক্ষাৎ করেননি।
দক্ষিণ কোরিয়ার একটি প্রতিনিধি দলের মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে উত্তর কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট কিম জং উনের সাথে বৈঠকের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। এই আমন্ত্রণ গ্রহণ করে সবাইকে চমকে দিয়েছেন।
এর আগে ট্রাম্পের প্রেস সেক্রেটারি স্যারাহ স্যান্ডার্স সাংবাদিকদের বলেছেন, উত্তর কোরিয়া তার পরমাণু কর্মসূচি বন্ধ করে দেয়ার ব্যাপারে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তার এই মন্তব্যে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়। তিনি আরো বলেন, “সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ না পাওয়া পর্যন্ত এধরনের কোনো বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে না।”
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যখন এই ঘোষণা দেন তখন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন আফ্রিকা সফর করছেন। শুক্রবার তিনি সাংবাদিকদের বলেছেন, কিমের সাথে বৈঠকের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নিজে।”
“আমি এই সিদ্ধান্তের বিষয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সাথে কথা বলেছি। আমাদের মধ্যে ভালো কথাবার্তা হয়েছে।”
এরপর শনিবার টিলারসন কেনিয়ায় তার পূর্ব নির্ধারিত কিছু কর্মসূচি বাতিল করে দেন। কূটনীতিকরা জানান যে উত্তর কোরিয়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয়ে কয়েকদিন ধরে কাজ করার পর তিনি খুব একটা সুস্থ বোধ করছিলেন না।
দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিনিধি দলের সদস্যরা যারা সম্প্রতি কিমের সাথে সাক্ষাৎ করেছেন, তারা বলেছেন, উত্তর কোরিয়ার লক্ষ্য পরমাণু কর্মসূচি বন্ধ করে দেয়া এবং এ ব্যাপারে তারা অঙ্গীকারও করেছেন। কিন্তু প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সাথে দেখা করার আগেই তারা যে এটা শুরু করবেন এরকম কিছু উত্তর কোরিয়ার পক্ষ থেকে বলা হয়নি। বরং আলোচনার স্বার্থে পরমাণু অস্ত্রের পরীক্ষা আপাতত বন্ধ করার বিষয়টি তারা বুঝতে পেরেছে।
ট্রাম্পও টুইট করে বলেছেন, আলোচনার সময় উত্তর কোরিয়া পরমাণু পরীক্ষা না চালানোর কথা দিয়েছে এবং তিনি তাদের এই কথাকে বিশ্বাসও করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স বলেছেন, উত্তর কোরিয়ার উপর তারা তাদের চাপ অব্যাহত রাখবেন। এ বিষয়ে ট্রাম্প চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং-এর সাথে কথাও বলেছেন। তারা দু’জনেই একমত হয়েছেন উত্তর কোরিয়ার উপর জারি করা নিষেধাজ্ঞা আপাতত বহাল রাখার ব্যাপারে।
চীনা সংবাদ মাধ্যমগুলোতে বলা হয়েছে, এ বিষয়ে চীনের ভূমিকা যে অনেক গুরুত্বপূর্ণ সেটা যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে স্বীকার করা হয়েছে। তবে উত্তর কোরিয়ার সংবাদ মাধ্যমে কোনো ধরনের বৈঠকের কথাই উল্লেখ করা হয়নি।
তবে যুক্তরাষ্ট্রের পত্রিকা ওয়াশিংটন পোস্ট শুক্রবার নিউ ইয়র্কে জাতিসঙ্ঘে উত্তর কোরিয়ার দূতের একটি বিবৃতি প্রকাশ করেছে যাতে তাদের ‘সর্বোচ্চ নেতার সাহসী সিদ্ধান্তের’ অগ্রগতির কথা স্বীকার করা হয়েছে। বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, “কোরীয় উপদ্বীপে শান্তি ও স্থিতি প্রতিষ্ঠা করা যেতে পারে।”
দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিনিধি দলের প্রাথমিক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আগামী মে মাসের মধ্যেই এই বৈঠক হতে পারে। তবে এখনও আলোচনার দিন তারিখ ও স্থান নির্ধারণ করা হয়নি।
তবে সম্ভাব্য স্থান হিসেবে দুটি জায়গার কথা বলা হচ্ছে- দুই কোরিয়ার সীমান্তে সৈন্যমুক্ত এলাকা অথবা চীনের রাজধানী বেইজিং।
দুই কোরিয়ার মধ্যে প্রথমে শান্তি আলোচনার প্রস্তাব দিয়েছিলেন দক্ষিণ কোরিয়ার নেতা। পরে উত্তর কোরিয়ার কিম জং আন তার নববর্ষের বার্তায় আকস্মিকভাবে এই আলোচনার প্রস্তাব করেন। এরপর উত্তর কোরিয়া দক্ষিণ কোরিয়ায় অনুষ্ঠিত শীতকালীন অলিম্পিকসে তাদের একটি প্রতিনিধি দল পাঠায় অংশগ্রহণের জন্যে।
অলিম্পিকসের পর দক্ষিণ কোরিয়ার একটি প্রতিনিধি দল পিয়ং ইয়ং-এ গিয়ে কিমের সাথে সাক্ষাৎ করেছেন। তারপর ওই দলটি ওয়াশিংটনে যান প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে তাদের বৈঠকের বিষয়ে অবহিত করার জন্যে।
হোয়াইট হাউজে বৈঠক শেষে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিনিধি দলের একজন সদস্য, দক্ষিণ কোরিয়ার জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা বলেছেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সাথে বৈঠক করতে কিম প্রস্তুত রয়েছেন এবং পরমাণু কর্মসূচি বন্ধ করার ব্যাপারেও তিনি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”
বিশ্লেষকরা বলছেন, এর আগেও যখন উত্তর কোরিয়ার সাথে শান্তি আলোচনা হয়েছে তখন দেশটি তাদের পরমাণু অস্ত্র পরীক্ষা বন্ধ রেখেছিল। এবং আলোচনায় তারা যা চেয়েছিল সেসব না পেয়ে হতাশ হওয়ার পরেই তারা আবার পরীক্ষা চালাতে শুরু করে।
অনেকে এই আশঙ্কাও প্রকাশ করেছেন যে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রশাসন হয়তো এর মধ্য দিয়ে ‘উত্তর কোরিয়ার পাতা ফাঁদে’ পা দিতে যাচ্ছে।
বিবিসি