শুক্রবার, ১১ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

‘মিথ্যা অভিযোগে খালেদা জিয়াকে সম্পৃক্ত করে চার্জশিট’

সেরাকণ্ঠ ডট কম :
জানুয়ারি ১০, ২০১৮
news-image

দুদকের উপপরিচালক হারুন-অর-রশীদ জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা। আবার তিনিই এই মামলা তদন্ত করে অন্যায়ভাবে খালেদা জিয়াকে মিথ্যা অভিযোগে সম্পৃক্ত করে চার্জশিট দাখিল করেন।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর বকশীবাজারে স্থাপিত ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ এর বিচারক ড. মো. আখতারুজ্জামানের আদালতে খালেদা জিয়ার পক্ষে যুক্তিতর্কে একথা বলেন তার আইনজীবী একে মোহাম্মদ আলী।

এদিন খালেদা জিয়ার পক্ষে অষ্টম দিনের মতো যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করা হয়। তবে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ না হলে আদালত আগামীকাল বৃহস্পতিবার পরবর্তী যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের জন্য দিন ধার্য করেন। এদিন একই আদালতে জিয়া চ্যারিটেবল মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তিতর্কের জন্য দিন ধার্য রয়েছে।

দুই মামলায় হাজিরা দিতে বেলা ১১টা ৫৩ মিনিটে আদালতে হাজির হন খালেদা জিয়া। দুপুর ১২টায় বিচারক এজলাসে বসেন। খালেদা জিয়ার পক্ষে যুক্তিতর্ক শুরু করেন তাঁর আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী। এ সময় আদালত বলেন, ‘আদালতের কার্যক্রম শুরু হওয়ার কথা সকাল সাড়ে নয়টায়। আপনারা ১২টার সময় কেন এলেন? এভাবে সময় নষ্ট করে কোর্ট কিভাবে চলবে? আমরা (বিচারক) আপনাদের (আইনজীবী) সম্মান করি বলে এভাবে যদি প্রতিদিনই দেরী করতে করতেই থাকেন, তাহলে কোর্ট কিভাবে চলবে? আপনারা আসেন না আসেন, এরপর থেকে আমি সকাল সাড়ে ১০টায় আদালতের কার্যক্রম শুরু করব।’

আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলীর উদ্দেশে বিচারক বলেন, তিনি অষ্টম দিনের মতো যুক্তিতর্ক শুনছেন। এর আগে খালেদা জিয়ার অপর জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আবদুর রেজাক খান বিস্তারিত বলেছেন। ‘আজই আপনারা শেষ করবেন’। আদালত এটা বলার সঙ্গে সঙ্গে এজলাসে উপস্থিত বিএনপির আইনজীবীরা হইচই শুরু করেন। ওই সময় বিচারক বলেন, ‘আপনারা হইচই করলে আমি আদালতের কার্যক্রম মুলতবি করব।’

তখন খালেদা জিয়ার অপর আইনজীবী আবদুর রেজাক খান বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করছি, মামলার প্রাসঙ্গিক বিষয় নিয়ে যুক্তিতর্ক তুলে ধরতে। তিনি বলেন, তিনটি কথার ওপর এই মামলা। প্রথম কথাÑ ম্যাডাম জিয়া (খালেদা জিয়া) অ্যাকাউন্ট খোলেন, দ্বিতীয় কথাÑ ম্যাডাম জিয়া টাকা উত্তোলন করেন, তৃতীয় কথাÑ ম্যাডাম জিয়া ডিস্ট্রিবিউট করেন। আর অতিরিক্ত একটা কথাÑ তিনি ট্রাস্ট গঠন করেন। এই চারটা কথা। এই চার কথার ওপর কেন আমাদের এতোদিন বলা লাগছে? আমরা বলেছি, সমস্ত কিছুই জাল-জালিয়াতি করে করা হয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি, মামলার প্রাসঙ্গিক বিষয়ে যুক্তিতর্ক তুলে ধরতে। যতক্ষণ যুক্তিতর্ক উপস্থান শেষ না হয়, ততক্ষণ অনুগ্রহ করে আমাদের কথা শুনবেন। এরপর পরিস্থিতি শান্ত হয়।

খালেদা জিয়ার পক্ষে অষ্টম দিনের মতো যুক্তিতর্ক উপস্থান শুরু করেন প্রাক্তন অ্যাটর্নি জেনারেল এজে মোহাম্মদ আলী। তিনি বলেন, দুদক কর্মকর্তা নূর আহমেদ ২০০৮ সালের ১১ জুন ‘অনুসন্ধানের নিদিষ্ট সময়সীমার মধ্যে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর অফিস থেকে প্রধানমন্ত্রীর এতিম তহবিলের সংশ্লিষ্ট নথি এবং সংশ্লিষ্ট তথ্য সম্বলিত কাগজপত্র সরবরাহ না করায় প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সম্পৃক্ততা সম্পর্কে মতামত প্রদান করা সম্ভব হচ্ছে না।’Ñ মর্মে একটি প্রতিবেদন দাখিল করেন।’

‘আর এই প্রতিবেদন দাখিলের মাত্র ১৪ দিনের ব্যবধানে অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা হারুন-অর-রশীদ কোন প্রকার সাক্ষ্য প্রমাণ ছাড়াই খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মিথ্যা তথ্য, সৃজনকৃত কাগজপত্র ও সাক্ষীদের নামে সাজানো ও মিথ্যা বক্তব্যের ভিত্তিতে ওই বছরের ২৫ জুন একটি মনগড়া প্রতিবেদন দাখিল করেন। তিনি ওই প্রতিবেদনে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে এই লাইনটি সংযুক্ত করেনÑ ‘অনুসন্ধানে তৎকালীন মুখ্য সচিবের পিএস সৈয়দ জগলুল পাশা ওই নথিপত্র উপস্থান ও সংরক্ষণের দায়িত্বে ছিলেন।’

তিনি বলেন, হারুন-অর-রশীদ অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা, আবার তিনিই এই মামলার তদন্ত করে অন্যায়ভাবে খালেদা জিয়াকে মিথ্যা অভিযাগে সম্পৃক্ত করে চার্জশিট (অভিযোগপত্র) দাখিল করেন।

তিনি আরও বলেন, সবার আগে এই মামলায় টাকার উৎস নির্ণয় করা জরুরী। বাংলাদেশে কুয়েত দূতাবাস থেকে যে পত্র দেওয়া হয়েছে, তাতে কুয়েতের আমির জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টকে টাকাটা দিয়েছে বলা আছে।

এরপর দুপুর ১টা ২৫ মিনিটের দিকে আদালত বিরতি দেন। বিরতি শেষে দুপুর ১টা ৫৪ মিনিটের দিকে খালেদা জিয়ার পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু করেন অপর আইনজীবী ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার।

যুক্তিতর্কে তিনি বলেন, প্রসিকিউশনের দায়িত্ব হল সন্দেহাতীতভাবে আসামির অভিযোগ প্রমাণিত করা। এক্ষেত্রে প্রসিকিউশন সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ হয়েছে। হিসাব খোলার ফর্মে খালেদা জিয়ার স্বাক্ষর নাই। তিনি ওই অ্যাকাউন্ট খোলার নির্দেশও দেননি। তিনি ব্যক্তিগত কিংবা প্রধানমন্ত্রী হিসাবে কখনও ক্ষমতার অপব্যবহার করেননি। যদি ক্ষমতার অপব্যবহারের এক তিল পরিমাণ তথ্য-প্রমাণ খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে পাওয়া যায়, তাহলে প্রচলিত আইন অনুসারে আদালত যে শাস্তি দেবেন তা মাথা পেতে নেব।

প্রসঙ্গত, ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই দুদক এ মামলা করে। ২০০৯ সালের ৫ আগস্ট এ মামলায় খালেদা জিয়া, তারেক রহমান, মাগুরার বিএনপির সাবেক সাংসদ কাজী সালিমুল হক কামাল, সাবেক মুখ্য সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ ও বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ভাগনে মমিনুর রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়।