বুধবার, ৪ঠা ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

২১১৭ সাল, ফিউচারিস্টিক পৃথিবী।

সেরাকণ্ঠ ডট কম :
নভেম্বর ১৭, ২০১৭
news-image

আসগর সাহেব ল্যাবে বসে আছেন। দুদিন ধরে তোলপাড় চলছে আর্থ-২.০ তে। মারস, বলা ভালো আর্থ -২.০ তে মানুষ বসত গড়েছে এই বছর বিশেক হবে। আগের পৃথিবীর সকল হাই আইকিউর মানুষ, ক্রিয়েটিভ ইনডিভিজুয়ালস, সকল প্রকার টেকনোলজি, স্পেস স্টেশন, ইত্যাদি সবই এখানে নিয়ে আসা হয়েছে। ওই পৃথিবীতে কেবল রয়ে গেছে লোয়ার অরবিটের নিম্নশ্রেণির মানুষেরা, যাদের তুচ্ছজ্ঞান করে এখানকার মডিফাইড মানুষেরা। তবে দুদিন ধরে এখানেও হৈচৈ চলছে। পৃথিবী থেকে কোন এক স্পেস শাটলে করে লোয়ার অরবিটের এক সাধারন মানুষ চলে এসেছে এখানে। কিন্তু তাকে কেউ কিছু করতে পারছে না, ফেরতও পাঠাতে পারছে না কারণ সে দাবি করছে তার কাছে হুমায়ূন আহমেদের ডিএনএ স্যাম্পল আছে। হুমায়ূন আহমেদকে চিনতে হলে আগে বাঙালি জাতিকে চিনতে হবে। ওয়ার্ল্ড ডমিনেশনে যারা এখন টপে আছে তাদের অধিকাংশই এখন বাঙালি, আর এই বাঙালিদের গত শতাব্দীর সবচেয়ে বিখ্যাত লেখক ছিলেন এই হুমায়ূন আহমেদ। সেই হুমায়ূন আহমেদের ডিএনএ স্যাম্পল পাওয়া মানে ক্লোন করে একজন হুমায়ূন আহমেদ সৃষ্টি করে তাঁকে এই পৃথিবীতে রেখে দেয়া। আসগর সাহেব ভাবলেন তিনি দেখা করতে যাবেন সেই ব্যক্তির সাথে, কারণ তার কাছ থেকে ডিএনএ স্যাম্পলটা নিতে পারলে ইতিহাস সৃষ্টি হবে।

– হ্যালো, আমি ডক্টর আসগর। আপনার নাম?
– আমি মিয়া সিরাজউদ্দিন রহমত আশফাক লিপু।
– আপনার নাম তো পৃথিবীর অন্যান্য মানুষদের তুলনায় বেশ বড়।
– আমি অন্যরকম তাই।
– তা শুনলাম, আপনার কাছে নাকি বরেণ্য কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের ডিএনএ স্যাম্পল আছে। সেটা কী জানতে পারি?
– একটি চুল। আমার দাদার রেখে যাওয়া বইতে পেয়েছি।
– বাহ! কিন্তু আপনার দাদার বইতে লেখক সাহেবের চুল আসল কীভাবে?
– আমার দাদা সে আমলে হুমায়ূন আহমেদের কাছ থেকে অটোগ্রাফ আনতে গিয়েছিলেন একবার, সেসময়ই হয়তো কোনভাবে তাঁর একটু চুল বইয়ের ভাঁজে আটকে যায়।
– গ্রেট। কিন্তু আপনি জানলেন কীভাবে যে এটি হুমায়ূন আহমেদেরই চুল!
– আমি সকল পরীক্ষা-নিরীক্ষা করিয়ে নিয়েই তবে এসেছি।
– আপনার দাবীটা কি তাহলে এখানে?
– আমি আপনাদের এই ডিএনএ স্যাম্পল দিতে রাজি আছি যদি আমাদের পৃথিবীর ওপর থেকে কৃত্রিম শিল্ড সরিয়ে দেয়া হয়। আমরা সূর্যের আলো দেখতে চাই, আমরা এসিড বৃষ্টি হলেও তা দেখতে চাই। কৃত্রিম দীর্ঘ জীবনের চেয়ে বাস্তব ক্ষুদ্র জীবনও অনেক বেশি আকাঙ্ক্ষার এখন আমাদের। আমরা সবাই হুমায়ূন আহমেদের মতোই জোছনাবিলাস করতে চাই একদম কাছে চলে আসা চাঁদটার দিকে তাকিয়ে।
– আমি আপনার এই প্রস্তাব সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে পৌঁছে দিতে পারি কিন্তু আমি যতটুকু জানি এই শিল্ড আপনাদের প্রোটেকশনের জন্যই দেয়া হয়েছিল।
– হোক, আমরা আমাদের মতো করে নিরাপত্তা তৈরি করে নেবো। তবুও ধাতব আকাশ আর দেখতে চাই না আমরা।
– আপনার কাছে থাকা স্যাম্পলটা অতি মূল্যবান। আমার মনে হয় না আমাদের হর্তাকর্তারা দ্বিমত করবেন আপনার প্রস্তাবে। দেখা যাক…

……………………

আসগর সাহেব অবাক হয়ে আবিষ্কার করলেন তার প্রস্তাব নাকচ হয়ে গেছে। কোনভাবেই এই শিল্ড খুলে দেয়া হবে না। কোন কারণ দর্শানোর প্রয়োজনও মনে করলেন না তারা। আকাশ দেখতে দিতে, বৃষ্টিতে ভিজতে দিতে, জোছনাবিলাস করতে দিতে এতো কীসের আপত্তি আসগর সাহেব বুঝতে পারলেন না। তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন তিনিই স্যাবোটাজ করবেন, শিল্ড মেশিন বিকল করে দিয়ে শিল্ড তুলে দেবেন।

– মিয়া সিরাজউদ্দিন রহমত আশফাক লিপু, আপনাকে আমি কথা দিচ্ছি আপনি পৌঁছে গিয়ে দেখবেন পৃথিবীর আকাশ আর ধাতব নেই।
– অনেক ধন্যবাদ আসগর সাহেব। তবে আমি যাই…

আসগর সাহেব তার যাবার পথের দিকে তাকিয়ে রইলেন। শিল্ড মেশিন বিকল হওয়া শুরু হয়েছে। খুব শিঘ্রই হয়তো তাকে পাকড়াও করতে লোকজন চলে আসবে। এই প্রথম তাদের আকাশের চাঁদের দিকে নজর পড়লো আসগর সাহেবের। ডেইমোস আর ফোবোস জুলুজুলু করে জ্বলছে যেন আকাশে। কী অদ্ভুত শুদ্ধ লাগছে তার নিজেকে হঠাৎ। একেই বুঝি জোছনাবিলাস বলে!

………………

পৃথিবীতে পৌঁছেই মিয়া সিরাজউদ্দিন রহমত আশফাক লিপু দেখলেন ঝলমলে এক আকাশ। সূর্যের তাপ অতি সহনীয়, অপর পাশে আপাত নিষ্প্রভ চাঁদটাও দারুণ এক জোছনাবিলাসের আভাস দিচ্ছে। অর্থাৎ তাঁর ধারণা সঠিক, এই পৃথিবীর মানুষকে শোষণ করার জন্য, তাদের পশ্চাৎপদ করে রাখার জন্য এই কাজটা করা হয়েছে। হঠাৎ একটা স্পেস শাটল উড়ে আসতে দেখা গেল, মনে হল তাল হারিয়ে পড়ে যাচ্ছে। ভেতর থেকে একজনকে কোনরকমে বের করে আনলো সবাই মিলে। মিয়া সিরাজউদ্দিন রহমত আশফাক লিপুকে দেখেই সে লোকটি দৌড়ে এসে জাপটে ধরলেন-

আমি চিনি আপনাকে। আমি পড়েছি কিছু বই হলোগ্রাফিক স্ক্রিনে। এখন বলুন আপনি আদতে কে? (মি)য়া (সি)রাজউদ্দিন (র)হমত (আ)শফাক (লি)পু = মিসির আলি নাকি হুমায়ূন আহমেদ?

আসগর সাহেবের কথা শুনে হেসে চোখে থাকা চশমাটা ঠিক করলেন সেই অদ্ভুত মানুষটি।