শনিবার, ১২ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

দুর্নীতি হয়নি, অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা: খালেদা

সেরাকণ্ঠ ডট কম :
নভেম্বর ১৭, ২০১৭
news-image

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় কোনো দুর্নীতি হয়নি বলে দাবি করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। তাঁর বিরুদ্ধে সম্পূর্ণ মিথ্যা অভিযোগ আনা হয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি। রাজনীতিতে সক্রিয় থাকার কারণে ক্ষমতাসীনরা তাঁকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে এসব মামলায় জড়িয়েছে বলে মনে করেন তিনি।

বৃহস্পতিবার জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় আত্মপক্ষ সমর্থন করে দেয়া বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। বেলা ১১টা ৫০ মিনিটে খালেদা জিয়া পঞ্চম দিনের মতো আত্মপক্ষ সমর্থন করে বক্তব্য শুরু করেন।

২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলাটি করে দুদক। এতিমদের সহায়তা করার উদ্দেশ্যে একটি বিদেশি ব্যাংক থেকে আসা দুই কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ এনে মামলাটি করা হয়।

খালেদা বলেন, ‘জিয়া অরফানেজের অর্থ সংগ্রহে আইনের কোনো ব্যতয় ঘটেনি। ট্রাস্টের কোনো পদে আমি ছিলাম না। অনুদান সংগ্রহ ও বিতরণের সঙ্গেও আমার কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। বাগেরহাটে অনুদানের টাকায় ট্রাস্টের মাধ্যমে এতিমখানা সুচারুভাবে পরিচালিত হচ্ছে। কোনো অভিযোগ সত্য নয়।’

খালেদা জিয়া বলেন, ‘মামলার সাক্ষ্য প্রমাণ থেকে জানা গেছে, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট বগুড়ায় জমি কিনে। এই জমি কেনা নিয়ে কোনো রকম অভিযোগ নেই। এই ট্রাস্টের বাকি টাকা ব্যাংকে গচ্ছিত রয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘দেশের ট্রাস্ট আইনে পরিচালিত কেউ সরকারি কর্মকর্তা না, আইনের লঙ্ঘন করা হলে ট্রাস্ট আইনে মামলা হতে পারে। কিন্তু দুর্নীতি দমন কমিশন মামলা করল। অভিযোগ ভিত্তিহীন। রাজনৈতিক কারণে মামলা চলছে। দায়ের করা মামলাগুলোর কোনো আইনগত ভিত্তি নেই।’

বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, ‘রাজনীতিতে সক্রিয় বলেই ক্ষমতাসীনরা আমাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে এসব মামলা দায়ের করা হয়েছে। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দায়ের করা দুর্নীতি মামলা তুলে নেয়া হয়েছে। অথচ অসত্য কথা ও ভিত্তিহীন অপপ্রচার চালিয়েও তারা ( সরকার) আমাদের জনগণ থেকে ব্যর্থ হয়ে এসব মামলার আশ্রয় নিয়েছে। জনগণের সামনে হেয় করার জন্যই এসব মামলা করা হয়েছে।’

খালেদা বলেন, ‘তাদের উদ্দেশ্য সফল হয়নি। বরং এসব করে সরকার জনগণের কাছে হেয় হচ্ছে। জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হচ্ছে। এদেশের মানুষ অনেক সচেতন এবং তারা সত্য ও মিথ্যার ফারাক সহজে বুঝতে পারে। তাই আমাদেরকে যত বেশি মামলায় জর্জরিত করা হচ্ছে তত বেশি দেশবাসীর সহানুভূতি ও সমর্থন পাচ্ছি। জনগণ আরও বেশি করে সঙ্গে সম্পৃক্ত হচ্ছে। সে কারণেই আমরা অসত্য ও যুক্তিহীন অভিযোগে দায়ের করা মামলা মোকাদ্দমায় মোটেই ভীত নই।’

সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের আশঙ্কার কারণ অন্য জায়গায়। সেটা হচ্ছে, অত্যন্ত সুপরিকল্পিত ও ন্যাক্কারজনকভাবে ন্যায়বিচারের সুযোগ বিলুপ্ত করা হয়েছে। শাসক মহল এসব অসৎ উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য কারসাজির আশ্রয় গ্রহণ করেছে। বিচার বিভাগককে সম্পূর্ণ আতঙ্কগ্রস্ত করা হয়েছে।’

অধস্তন আদালত আইন মন্ত্রণালয়ের প্রভাবমুক্ত হয়নি দাবি করে তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি ন্যাক্কারজনক ঘটনায় আদালতের ওপর শাসক মহলের কর্তৃত্ব আরও বেড়েছে। ন্যায়বিচারের সুযোগ আরও সীমিত হয়েছে। জনগণের ন্যায়বিচার পাওয়ার শেষ আশ্রয়স্থল সুপ্রিম কোর্টে ন্যাক্কারজনক ও নজিরবিহীন ঘটনা ঘটেছে।’

খালেদা বলেন, ‘সংবাদ মাধ্যমের কোনো স্বাধীনতা নেই। গণমাধ্যম স্বাধীনভাবে সংবাদ প্রচার করতে পারছে না। সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিল করার কারণেই এসকে সিনহা সরকারের রোষানলে পড়েন।’

বিচারকের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনি দেখেছেন প্রধান বিচারপতিকে কী ধরনের পরিণতির শিকার হতে হয়েছে, তা সবাই জানে। এসকে সিনহাকে তার পদ থেকে সরে যেতে বাধ্য করা হয়েছে। সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীর রায় বাতিল করার পর থেকেই ক্ষমতাসীনদের অপতৎপরতা শুরু হয়। শাসক মহল তাদের ক্ষোভ চেপে রাখতে পারেনি। তারা প্রকাশ্যে প্রধান বিচাপতিকে হুমকি ও আক্রমণাত্মক আচরণ করতে শুরু করে। ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে রায় দেয়ার অপরাধে তাকে চলে যেতে বলা হয়।’

খালেদা বলেন, ‘সিনহা আত্মপক্ষ সমর্থন করে ব্যাখ্যা দিয়েও ক্ষমতাসীনদের ক্ষোভ কমাতে পারেননি। তাকে তার বাসভবনে কয়েক দিন অন্তরীণ ও বিচ্ছিন্ন অবস্থায় কাটাতে হয়। এরপর সরকারের তরফ থেকে ঘোষণা করা হয় এসকে সিনহা অসুস্থ। পরে তাকে বিদেশে পাঠানো হয়।’