বৃহস্পতিবার, ২৮শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

র‌্যাম্প মডেল থেকে জঙ্গি

সেরাকণ্ঠ ডট কম :
সেপ্টেম্বর ২১, ২০১৭
news-image

নূরে আলম জিকো : সুন্দর শারীরিক গঠন, সুদর্শন। চেহারায় আভিজাত্যের ছাপ। লেখাপড়া করেছেন একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে।

ছিলেন র‌্যাম্প মডেলিংয়ে। বেশ কয়েকটি মডেলিং প্রতিযোগিতায় অংশও নিয়েছেন। শিক্ষা জীবন শেষে কিছুদিন ব্যবসাও করেছেন। তারপর হঠাৎ জীবনের গতি পরিবর্তন। হয়ে উঠলেন জঙ্গি।

তিনি বুধবার দিবাগত রাতে র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হওয়া জঙ্গি ইমাম মেহেদী হাসান ওরফে আবু জিব্রিল(২৯)।

২০১৫ সালে উগ্র মতাদর্শে বিশ্বাস থেকে জেএমবির সারোয়ার-তামিম গ্রুপের সংস্পর্শে আসেন তিনি। এরপর সংগঠনের জন্য কর্মী সংগ্রহ, অর্থ সংগ্রহ, জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধকরণসহ বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেন। এক সময় সারোয়ার-তামিম গ্রুপের রিজার্ভ হিসেবে রক্ষিত ব্রিগেড আদ দার-ই কুতনীর কমান্ডার হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব-৩ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্ণেল তুহিন মোহাম্মদ মাসুদ এসব কথা জানান।

তুহিন মোহাম্মদ মাসুদ বলেন, ‘বুধবার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে রাজধানীর খিলগাঁও থানা এলাকার দক্ষিণ বনশ্রীতে অভিযান পরিচালনা করে মেহেদীকে গ্রেপ্তার করা হয়। এসময় তার কাছ থেকে দুটি ল্যাপটপ, একটি মোবাইল ফোন, একটি পাসপোর্ট ও উগ্রবাদী বইসহ বিভিন্ন আলামত উদ্ধার করা হয়। তিনি রাজধানীর বনানী ও উত্তরা পশ্চিম থানায় মামলার এজাহারভুক্ত আসামি।

মেহেদী পটুয়াখালী জেলার বাউফল থানার রাজাপুর গ্রামের মো. খোরশেদ আলমের ছেলে।

র‌্যাব-৩ এর গোয়েন্দা বিশ্লেষণ ও মেহেদীকে জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্যের বরাত দিয়ে তুহিন মোহাম্মদ মাসুদ বলেন, ‘২০১৫ সালে মেহেদী জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়েন ও সারোয়ার-তামিম গ্রুপের সংস্পর্শে আসেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অব্যাহত অভিযানে জঙ্গিরা কোণঠাসা হয়ে পড়লে তিনি তাদের রিজার্ভ হিসেবে রক্ষিত ব্রিগেড আদ দার-ই-কুতনীর কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন ও ব্রিগেডের জন্য কর্মী সংগ্রহ শুরু করেন।

ইমাম মেহেদী ঢাকা, টাঙ্গাইল ও রাজশাহীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে জঙ্গি হামলায় উদ্বুদ্ধ সদস্যদের শপথ পাঠ করাতেন। আদ্-দার-ই-কুতনীতে সাহায্যকারীদের মধ্যে মুহাজির যোদ্ধা, সালাফি আলেম বোর্ড এবং অর্থ প্রদানকারী বিভিন্ন ব্যক্তি রয়েছে বলে ইমাম মেহেদী জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন। ব্রিগেডের দুজন জঙ্গি ইতিমধ্যে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জঙ্গিবিরোধী অভিযানে নিহত হয়েছে বলে সে জানিয়েছে।’

তুহিন মোহাম্মদ মাসুদ জানান, ইমাম মেহেদীর কাছ থেকে উদ্ধার করা আলামত পরীক্ষা করে গোয়েন্দারা নিশ্চিত হয়েছেন যে, ব্রিগেড আদ্-দার-ই-কুতনী অপারেশনাল সক্ষমতা অর্জন করেছে। তারা যে কোনো স্থানে নাশকতামূলক তৎপরতা চালাতে সক্ষম।

এর আগে ২০১৬ সালের ৮ অক্টোবর র‌্যাবের অভিযানের সময় পালাতে গিয়ে নিহত হন জেএমবির সারোয়ার-তামিম গ্রুপের তৎকালীন আমীর সারোয়ার জাহান ওরফে মানিক ওরফে আবু ইব্রাহিম আল হানিফ। পরে তার বাসা থেকে উদ্ধার নথি বিশ্লেষণ করে তাদের দুটি অপারেশনাল ব্রিগেড প্রতিষ্ঠার তথ্য পায় র‌্যাবের গেয়েন্দারা। এরমধ্যে রয়েছে বদর স্কোয়াড ও ব্রিগেড আদ্-দার-ই কুতনী। সারোয়ার জাহান নিহত হওয়ার কিছুদিন পর র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ এই দুই ব্রিগেডের ব্যাপারে সাংবাদিকদের অবহিত করেছিলেন। সেখানে তিনি দাবি করেছিলেন গুলশানের হলি আর্টিজান হামলার নেপথ্যে বদর স্কোয়াড কাজ করেছিল।