শুক্রবার, ১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

অপসাংবাদিকতার বিরুদ্ধে সাংবাদিকতার শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদ

সেরাকণ্ঠ ডট কম :
আগস্ট ১০, ২০১৭
news-image

সেই ১৯৬২ সাল থেকে বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতা শেখাচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ। আজ সেই বিভাগেরই একজন শিক্ষক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকের বিরুদ্ধে অপসাংবাদিকতায় লিপ্ত হয়েছে কয়েকটি গণমাধ্যম।

সেই অপসাংবাদিকতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ এবং বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রকাশের দাবি জানিয়েছেন বিভাগের বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা। এতে অংশ নিয়ে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন বিভিন্ন বিভাগের কয়েকশ শিক্ষক, ছাত্র ও কর্মকর্তা-কর্মচারী। আজ বুধবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে মানববন্ধন করেন তাঁরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ এবং বিভাগের অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন এই মানববন্ধনের আয়োজন করে।

মানববন্ধনে বক্তব্য দেন বিভাগের সাবেক চেয়ারপারসন ও অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম, বর্তমান চেয়ারপারসন ও অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মফিজুর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও আইন বিভাগের ডিন অধ্যাপক ড. রহমত উল্লাহ, সিনেট সদস্য ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ভারপ্রাপ্ত ডিন অধ্যাপক ড. আ জ ম শফিউল আলম ভূঁইয়া, নীল দলের সাবেক আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. নাজমা শাহীন, দৈনিক মানবকণ্ঠের সম্পাদক আনিস আলমগীর, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস ও সামিয়া রহমান প্রমুখ।

এ সময় অধ্যাপক শেখ আবদুস সালাম বলেন, ‘বাংলাদেশ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এক অভিন্ন সত্তা। আমাদের বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছিল নেতৃত্বদানকারী প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠান দেশ ও জাতির পথপ্রদর্শক। কিন্তু গত কয়েকদিন আগে থেকে আমরা লক্ষ করছি কয়েকটি গণমাধ্যম এই প্রতিষ্ঠানকে নিয়ে বিভিন্ন ধরনের অপপ্রচার চালাচ্ছে। তারা সাংবাদিকতার নামে একধরনের অপপ্রচারের মাধ্যমে গণমাধ্যমের বস্তুনিষ্ঠতাকে হারাচ্ছে।’ বস্তুনিষ্ঠতা সাংবাদিকতাকে বাদ দিয়ে অপপ্রচারে লিপ্ত হয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

আবদুস সালাম আরো বলেন, একধরনের সাংবাদিক আছেন যাঁরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট অধিবেশনের আহ্বান ও এর কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশ না জেনে বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে মিথ্যা সংবাদ প্রচার করছেন বলে মন্তব্য করেন তিনি।

মানববন্ধনে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. রহমত উল্লাহ বলেন, সাংবাদিকতা একটি মহান পেশা। সমাজ বিনির্মাণে এর অবদান সবচেয়ে বেশি। কিন্তু সাংবাদিকতার মধ্য দিয়ে যাঁরা দেশ নির্মাণ করতে চান, তাঁরাই আজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং এ বিশ্ববিদ্যালয়কে নিয়ে মিথ্যা সংবাদ প্রচার করছেন। তাঁরা আইন বোঝেন না, সংবিধান বোঝেন না।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিককে সৎ ও সত্যের প্রতীক আখ্যায়িত করে অধ্যাপক রহমত উল্লাহ বলেন, তিনি (আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক) হচ্ছেন মানবতা ও আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাঁর যে মহত্ত্ব ও আদর্শ তা অতি অসাধারণ। অথচ আজ কিছু মিডিয়া তাঁর বিরুদ্ধে সংবাদ প্রচার করছে।

সাংবাদিকতা নিজে আক্রান্ত হচ্ছে

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টেলিভিশন, ফিল্ম অ্যান্ড ফটোগ্রাফি বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারপারসন অধ্যাপক ড. আ জ ম শফিউল আলম ভূঁইয়া বলেন, সম্প্রতি উপাচার্যকে নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যম যে সংবাদ প্রচার করছে তাঁর দ্বারা সাংবাদিকতা নিজে আক্রান্ত হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়কে আক্রান্ত করছে। তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে কলঙ্কিত করার চেষ্টা করছে।

শফিউল আলম ভূঁইয়া আরো বলেন, উপাচার্যের কী দোষ যে তাঁর বিরুদ্ধে আজ অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। আজ বিশ্ববিদ্যালয় শান্তিপূর্ণভাবে চলছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো সেশনজট নেই। এখানে কোনো ধরনের অপরাধ সংঘটিত হয় না। এগুলোই তাঁর দোষ? আর এসব সহ্য করতে না পেরে কিছু সুযোগসন্ধানী তাঁর বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে যেকোনো ধরনের ষড়যন্ত্র শিক্ষক সমিতি শক্তভাবে মোকাবিলা করবে বলে উল্লেখ করেন সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শফিউল আলম ভূঁইয়া।

উপাচার্যকে নিয়ে ব্যঙ্গ করা হচ্ছে

মানববন্ধনে মানবকণ্ঠের সম্পাদক আনিস আলমগীর বলেন, এটা এমন একটা সময় যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও এর উপাচার্যকে নিয়ে ব্যঙ্গ করা হচ্ছে। বিশেষ করে উপাচার্যের নাম ধরে ব্যঙ্গ করছে আমাদেরই খুব কাছের লোক, সেটা নিন্দনীয়। তিনি বলেন, কেউ ২৪ ঘণ্টা টেলিভিশন চালিয়ে যদি সেখানে চার ঘণ্টা নিজের চেহারাই দেখায়, তাহলে রাস্তার মানুষও সো কলড (তথাকথিত) সেলিব্রিটি হতে পারে। ঘরে ঘরে নাম পাওয়া মানেই সেলিব্রিটি না।

গণমাধ্যম একটা এজেন্ডা বাস্তবায়নের চেষ্টা করছে

বর্তমান পরিস্থিতিতে মানববন্ধনের এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানান গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সামিয়া রহমান। তিনি বলেন, গণমাধ্যম কয়েকদিন ধরে যে কাজ করছে সেটা একটা এজেন্ডা বাস্তবায়ন। যারা করছে তাদের ব্যাকগ্রাউন্ড যদি দেখেন দেখা যাবে দেশের ১/১১ সময় তাদের ভূমিকা একই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গত কয়েক বছরে একদিনের জন্যও বন্ধ হয়নি। সেশনজট নেই। ঠিকমতো ক্লাস না নিলে আমাদের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের ব্যবস্থা নেওয়ারও সুযোগ আছে।

তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে অস্থিতিশীল করতে চায়

মানববন্ধনের সঞ্চালক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের চেয়ারপারসন অধ্যাপক মফিজুর রহমান বলেন, ‘নির্বাচনকে সামনে রেখে অপশক্তিগুলো সক্রিয় হয়ে উঠেছে। সেই সক্রিয় হওয়ার লক্ষ্যেই তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে অস্থিতিশীল করে তুলতে চায়। সে জন্য তারা গণমাধ্যমকে ব্যবহার করছে। আমরা লক্ষ করছি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিভাবক উপাচার্যকে উদ্দেশ করে বিভিন্ন রকম অপপ্রচার চালাচ্ছে। তখন আমরা ব্যথিত হই, শঙ্কিত হই।’

মফিজুর রহমান বলেন, ‘গণমাধ্যমের যে সামাজিক ভূমিকা পালন করার কথা, সেটা যেমন কোনো কোনো গণমাধ্যম করছে আবার বিভিন্ন রকম উদ্দেশ্য দ্বারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে। আজ আমরা সেই প্রচারের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে এখানে দাঁড়িয়েছি।’