‘ভালো কাজে পুরস্কৃত, খারাপ কাজে কঠোর শাস্তি’
নিজস্ব প্রতিবেদক : ভালো কাজ করলে যেমন পুরস্কৃত করা হবে, তেমনি খারাপ কাজ করলে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ।
রোববার দুদকের প্রধান কার্যালয়ে কমিশনের সমন্বিত জেলা কার্যালয় ও বিভাগীয় কার্যালয়ের উপপরিচালক, পরিচালক ও মহাপরিচালকদের সঙ্গে জরুরি সভায় কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে তিনি এ কথা বলেন। দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রনব কুমার ভট্টাচার্য সভার ওই বিষয়টি জানিয়েছেন।
সভায় দুদক দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তে কাগজ-পত্র পর্যবেক্ষণ, ভয়-ভীতি প্রদর্শন না করে সঠিকভাবে অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের জিজ্ঞাসাবাদ, ঘটনাস্থল পরিদর্শন, তদন্ত প্রতিবেদনে স্কেচ ম্যাপ সংযোজন, যথা সময়ে কেস ডায়েরি লিখন, প্রাসঙ্গিক তথ্য সংযোজন, অপ্রাসঙ্গিক তথ্য প্রদান না করা এবং সময়াবদ্ধ সময়ে অনুসন্ধান বা তদন্ত কার্য সম্পাদন করা নির্দেশ দেন দুদক চেয়ারম্যান।
সভায় তিনি বলেন, সঠিকভাবে দুর্নীতির অভিযোগ তদন্ত করা হলে দেশের মানুষের প্রত্যাশা অনুযায়ী কমিশনের শতভাগ মামলার সাজা নিশ্চিত করা সম্ভব। কমিশনের মামলা দালিলিক প্রমাণাদী নির্ভর। কোনো মামলাই অনুমান নির্ভর কিংবা ধারণাভিত্তিক নয়। প্রত্যেক আসামির বিরুদ্ধে ফৌজদারি দায় সুনির্দিষ্ট করতে হবে। আইন অনুযায়ী নির্ধারিত সময়েই প্রতিটি অনুসন্ধান এবং তদন্ত সম্পন্ন করতে হবে। ভালো কাজ করলে যেমন পুরস্কৃত করা হবে, তেমনি খারাপ কাজ করলে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ইকবাল মাহমুদ বলেন, দুদকের মামলায় যে সকল আসামি এখনো আইন-আদালতে আত্মসমর্পণ করেননি। কিংবা আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে কমিশনের তদন্ত কাজে বিঘ্ন সৃষ্টি করছেন, তাদেরকে অবশ্যই আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। তদন্ত বা অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে যদি কোনো ব্যক্তি অনুসন্ধান বা তদন্ত সংশ্লিষ্ট বিষয়ে কোনো তথ্য/রেকর্ডপত্র সরবরাহ না করে অনুসন্ধান/তদন্ত কাজে বাধা সৃষ্টি করলে তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ১৯(৩) ধারা অনুযায়ী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা অনুসন্ধান বা তদন্ত সময়াবদ্ধ সময়ে সম্পন্ন না হওয়ার কারণ, তাদের পদোন্নতি, প্রশিক্ষণ, ভালো কাজের স্বীকৃতিসহ বিভিন্ন বিষয়াদি কমিশনের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, বর্তমান কমিশন পদোন্নতির ক্ষেত্রে ন্যূনতম বিধি-বিধানের পরিপন্থি কিছু করবে না। পদোন্নতি, পদায়ন এবং প্রশিক্ষণের সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়নে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নীতিমালা হলেই তা অনুসরণপূর্বক পদোন্নতি প্রদান করা হবে। এমনকি বদলির ক্ষেত্রেও নীতিমালা অনুসরণ করা হবে।
গণশুনানি প্রসঙ্গে সংস্থা প্রধান বলেন, প্রতিটি গণশুনানির পরপরই এ সংশ্লিস্ট বিষয় সম্বলিত প্রতিবেদন কমিশনে জমা দিতে হবে, যাতে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয়। ফলোআপ গণশুনানি করা হবে। গণশুনানিতে কোনো কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া গেলে তাৎক্ষণিকভাবে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণের ব্যবস্থা নেওয়া হবে। গণশুনানির অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বেশ কয়েকজন কর্মকর্তাকে বদলি, এমনকি সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
তিনি বলেন, গণশুনানি একটি গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম, কারণ এটিও জনগণের অভিযোগ প্রদানের একটি ফোরাম, জনগণের অভিযোগ অবশ্যই দ্রুত আমলে নিতে হবে। এক্ষেত্রে প্রয়োজনে কমিশন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় কিংবা বিভাগকে বিষয়টি অবহিত করবে।
সভায় দুদক কমিশনার ড. নাসিরউদ্দীন আহমেদ বলেন, কমিশন এখন পর্যন্ত ৬১টি গণশুনানি সম্পন্ন করেছে। ফলোআপ গণশুনানি বাস্তবায়ন করা গেলে জনগণ উপকৃত হবেন।
অপর কমিশনার এএফএম আমিনুল ইসলাম বলেন, তদন্ত প্রতিবেদনে ইচ্ছাকৃত মিথ্যা তথ্য দিলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সভায় আরো বক্তব্য রাখেন পরিচালক মো. আবুল হাসান, মো. আবদুল আজিজ ভূঁইয়া, নাসিম আনোয়ার, মো. আবু সাঈদ প্রমুখ।