‘জিহাদি’ সংগ্রহের চেষ্টায় নব্য জেএমবি
ধারাবাহিক অভিযানে জঙ্গি সংগঠন নব্য জেএমবি দুর্বল হয়ে আসলেও তারা সদস্য সংগ্রহের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে বলে জানিয়েছে র্যাব। জঙ্গি তৎপরতার অভিযোগে গ্রেপ্তারদেরকে জিজ্ঞাসাবাদে এমন সব তথ্য বেরিয়ে এসেছে বলে জানিয়েছে বাহিনীটি।
বুধবার রাজধানীতে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখায় র্যাব-৩ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল তুহিন মোহাম্মদ এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, বাড্ডায় গ্রেপ্তার জেএমবির সারোয়ার-তামিম গ্রুপের তিন সদস্য সংগঠনের পক্ষে কর্মী ও অর্থ সংগ্রহ, জিহাদে উদ্ধুদ্ধকরণ ও হিযরতের পূর্ব প্রস্তুতিমূলক নেয়ার দায়িত্বে ছিল।
বুধবার সকালে বাড্ডার আফতাবনগর এলাকায় গোপন বৈঠক করার সময় এই তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরা হলেন মুশফিকুল হক, বিপ্লব হোসেন ওরফে সুন্নাহ কামাল ওরফে মাওলানা কামাল হোসেন বিপ্লবী ও মামুনুর রশিদ ওরফে আবু ইউশা।
র্যাব কর্মকর্তা তুহিন মোহাম্মদ মাসুদ বলেন, এই তিন জন ইমাম মেহেদী নামে একজন বড় ভাইয়ের তত্ত্বাবধানে জেএমবির সারোয়ার তামিম গ্রুপের পুনর্গঠনের কাজে নিয়োজিত ছিল।
এ ছাড়া গত ১০ এপ্রিল র্যাবের একটি দল মোহাম্মদপুরের নূরজাহান রোডের একটি বাড়িতে আভিযান চালিয়ে ফাতেমা আক্তার রুমা এবং উত্তরা এলাকায় অভিযান চালিয়ে জাইদুল হক জিহান নামে জেএমবির সারোয়ার-তামিম গ্রুপের দুইজন সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়। তখন থেকেই এ সংগঠনের অন্যান্য সদস্যদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যাহত ছিল।
গ্রেপ্তারকৃতদের বরাত দিয়ে র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, মুশফিকুল হক বিগত ২০১২ সাল থেকে ‘রিটার্ন টু ইসলাম’ নামে একটি সংগঠনের সঙ্গে জড়িত ছিল। সংগঠনটি উগ্র মতাদর্শে উদ্বুদ্ধ ছিল। এই সংগঠনের অন্যতম পৃষ্ঠপোষক মামুনুর রশিদ ওরফে কাজল ওরফে ইবনে আজিজুর রহমান প্রথমে তাকে জেএমবির সারোয়ার-তামিম গ্রুপের আদর্শে অনুপ্রাণিত করে।
মামুনুর রশিদ ওরফে কাজল গত ছয় থেকে সাত মাস যাবৎ নিজ এলাকা সিলেট থেকে নিখোঁজ রয়েছেন।
র্যাবের দাবিম মুশফিকুল মহাখালীতে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার জন্য ঢাকায় আসলে ইমাম মেহেদী, বিপ্লব হোসেন কামাল ওরফে সুন্নাহ কামাল ওরফে মাওলানা কামাল হোসেন বিপ্লবী, তাওহীদসহ কয়েকজন তাকে মহাখালী কেন্দ্রিক সারোয়ার-তামিম গ্রুপের সক্রিয় সদস্য হিসাবে প্রথমে অনুবাদক হিসেবে নিয়োজিত করে।
মুশফিকুল র্যাবকে জানান, সাজিদ হাসান, তৌহিদ এবং পূর্বে গত ১০ এপ্রিল গ্রেপ্তার জাইদুল হক জিহান এবং ২০১৬ সালে গাজীপুরে জঙ্গি অভিযানে নিহত জঙ্গি অপুসহ কয়েকজন মিলে তারা ঢাকায় ফার্মগেটের একটি বাসায় নিয়মিত জঙ্গিবাদের গোপন মিটিংয়ে মিলিত হতেন। মুশফিকুল মোবাইলে বিভিন্ন সাংকেতিক বার্তা সংশ্লিষ্ট অ্যাপসের মাধ্যমে জঙ্গি সংশ্লিষ্ট বার্তা আদান প্রদান, জঙ্গি সংশ্লিষ্ট ভিডিও, বিভিন্ন আর্টিকেলের পিডিএফ কপি এবং জঙ্গি সংশ্লিষ্ট ফান্ডের অর্থায়নে সরাসরি জড়িত ছিলেন। তিনি সর্বদাই বিভিন্ন সাংকেতিক বার্তার মাধ্যমে অত্যন্ত গোপনীয়ভাবে জঙ্গি সংগঠনের অর্থায়নসহ সংগঠকদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতেন।
গ্রেপ্তারকৃত মামুনুর রশিদ ওরফে আবু ইউশা জানান, তিনি ইমাম মেহেদী এবং তাওহিদের মাধ্যমে জেএমবির সারোয়ার-তামিম গ্রুপের একজন সক্রিয় সদস্য হিসেবে জঙ্গিবাদি কার্যক্রমে জড়িয়ে পড়ে। আরবি ভাষায় দক্ষতা থাকায় তিনি সাংকেতিক বার্তা সংশ্লিষ্ট অ্যাপসের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের জঙ্গি সংশ্লিষ্ট আর্টিকেল সংগ্রহ করে অনুবাদের মাধ্যমে জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ করার কাজে নিয়োজিত ছিলেন।
জঙ্গি সংশ্লিষ্ট কাজে ব্যবহার করার জন্য ইমাম মেহেদীকে বেশকিছু ভূয়া নামে রেজিস্ট্রেশন করা সিম দেন এবং ইন্টারনেট থেকে জঙ্গি সংশ্লিষ্ট ভিডিও সংগ্রহ ও সরবরাহ করতেন।
বিপ্লব হোসেন কামাল ওরফে সুন্নাহ কামাল জানান, তিনি ইমাম মেহেদী, সাজিদ, তাওহিদ এবং অন্যান্যদের মাধ্যমে হলি আর্টিজান ঘটনার পূর্ব থেকেই জেএমবির সারোয়ার-তামিম গ্রুপের সদস্য হিসেবে জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধকরণ ও অংশগ্রহণের জন্য কর্মী সংগ্রহের কাজে নিয়োজিত ছিল। একটি আইটি কোম্পানিতে চাকরির সুবাদে জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ করতে বিভিন্ন ধরনের জঙ্গি সংশ্লিষ্ট ভিডিও, পিডিএফ বই, আর্টিকেল ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহ ও সরবরাহের কাজে নিয়োজিত ছিলেন। এগুলো পরে বাংলায় অনুবাদ করা হতো। তিনিও দেশিও প্রবাসীদের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করে সংগঠনকে পুনর্গঠিত করার চেষ্টা করছিলেন।
কামাল জানান, পরিবারের কাউকে কোনো কিছু না বলে বেশ কিছুদিন আগে তিনি বাড়ি থেকে বের হয়ে যান।