শুক্রবার, ১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

ছেলেকে টপকে গেলেন মা-খালা

সেরাকণ্ঠ ডট কম :
জুলাই ২৪, ২০১৭
news-image

নাটোর: এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় ছেলের সঙ্গে অংশ নিয়েছিলেন একই সঙ্গে মা ও খালা। ফলাফল ঘোষণার পর দেখা গেল অবাক করা ঘটনা। ছেলেকে টপকে গিয়ে মায়ের দারুণ রেজাল্ট। আর মাকে টপকে গিয়ে খালা করেছেন আরো ভালো ফলাফল।

রোববার (২৩ জুলাই) এইচএসসির ফলাফল ঘোষণার পর থেকেই আনন্দের জোয়ার বইছে নাটোর শহরের মলিকহাটি এলাকার রুহুল আমিনের বাড়িতে।

রুহুল আমিনের ছেলে রাকিব আমিন চলতি বছরে কারিগরী শিক্ষা বোর্ডের অধীনে ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং ট্রেড থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়। ফলাফলে সে জিপিএ ৩.৬৭ পেয়ে পাস করেছে।

তবে তার মা শাহানাজ বেগমের ক্ষেত্রে ঘটেছে চমকপ্রদ ঘটনা। ২২ বছর আগে কলেজ ত্যাগ করা মা এবার নাটোর মহিলা কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় বসেছিলেন। তিনি অর্জন করেছেন জিপিএ-৪.৮৩। যা ছেলের ফলাফলের চেয়েও উজ্জ্বল।

অন্যদিকে, রাকিব আমিনের খালা মমতা হেনা একই কলেজে কম্পিউটার অপারেশন ট্রেডে ভর্তি হন শাহনাজ বেগমের ব্যাচেই। চলতি বছরে তিনিও এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেন। তবে তিনি অর্জন করেছেন জিপিএ-৪.৮৮।

মা খালার এই ফলাফলে লজ্জিত হওয়ার চেয়ে দারুণ খুশি রাকিব। তাই ফলাফল পেয়েই সে মা-খালার মুখে মিষ্টি তুলে দেয়। মা খালাও ছেলেকে টপকাতে পেরে দারুণ খুশি।

এদিকে, একই পরিবারের তিনজনকে পাস করতে দেখে চমকে গেছেন অনেকেই। ফলাফল ঘোষণার পরপরই তাই তাদের একনজর দেখতে অনেকেই ভিড় করেন শহরের মলিকহাটি এলাকার রুহুল আমিনের বাড়িতে।

পরিবার সূত্রমতে, ১৯৯৫ সালে এসএসসি পাস করার পর রুহুল আমিনের সঙ্গে বিয়ে হয় শাহানাজ বেগমের। এরপর আর পড়াশোনা করায় হয়নি। বর্তমানে তিনি এক ছেলে ও মেয়ের মা। তবে সন্তানদের পড়ালেখা করাতে গিয়ে আবারো পড়াশোনার প্রতি টান অনুভব করেন শাহানাজ বেগম। তাই ২২ বছর পর ভর্তি হন নাটোর মহিলা কলেজে।

এদিকে, শাহনাজ বেগমের ফুপাতো বোন মমতা হেনা যখন দেখলেন তার মামাতো বোন এতোদিন পর ফের পড়াশোনা শুরু করেছেন, তখন তিনিও শুরু করলেন পড়াশোনা। ১৯৯৩ সালে এসএসসি পাস করে গৃহবধূ হওয়ার পর হাতে বই ধরা হয়নি গেল ২৪ বছর ধরে। দুই বোনই কম্পিউটার অপারেশন ট্রেডে ভর্তি হয়ে চলতি বছরের এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেন।

মায়ের ভালো ফলাফলে খুব খুশি ছেলে রাকিব জানায়, অর্থিক সমস্যার কারণে তার তিনটি বই কেনা হয়নি। ধার করতে হয়েছে অন্যদের থেকে। তার চেয়ে ভালো রেজাল্ট করলেও কোনো কষ্ট নেই বরং আনন্দ এজন্য যে, তার মা ও খালা এতকিছুর পরও প্রমাণ করতে পেরেছেন, ইচ্ছা থাকলেই করা যায় যে কোনো কিছু।

মা শাহনাজ বেগম বললেন, এই ফলাফলের নেপথ্যে কাজ করেছে তার ইচ্ছাশক্তি। দুই সন্তানের পর নিজের পড়ালেখার খরচ চালানোর সামর্থ্য আমার ছিলো না। এগিয়ে আসেন বাবা ও ভাই। পড়াশোনার জন্য বই দেন ভাই, ফরম পূরণের টাকা দেন বাবা। স্বামী দিয়েছেন অনুপ্রেরণা। এভাবেই আমার আজকের ফলাফল।

খালা মমতা হেনা খুশিতে কেঁদে ফেলে বলেন, ‘নতুন করে পড়াশোনা করতে গিয়ে উৎসাহ পেয়েছি আমার ভাই ও মেয়ের থেকে। আর বাকিরা করেছে উপহাস বিদ্রুপ। পড়তে গিয়ে আর্থিক টানাপোড়েন পোহাতে হয়েছে প্রচুর। নতুন বই কিনতে পারিনি, পুরাতন বই কিনেছি। দুই বোন মিলে একসেট বই কিনে পড়েছি। বড় মেয়ের টাকায় ফরম পূরণ করেছি।

মমতা হেনার মেযে সুরাইয়া সূচি বলেন, গত বছর আমি এইচএসসি পাস করার পর আমার মাকে আবারও পড়তে বলি। কেননা আমি যখন মায়ের গর্ভে তখন আমার জন্য তিনি পড়ালেখা ছেড়েছিলে। আজ আমার মায়ের জন্য আমরা গর্বিত।

মেয়ে ও নাতির ভালো ফলাফলের সংবাদে খুশি শাহানাজ বেগমের বাবা হাজী শাহজাহান আলী বলেন, জীবন সায়াহ্নে এসে এমন ঘটনা তাকে গর্বিত করেছে।

স্ত্রী-সন্তানের ফলাফলে খুশি রহুল আমিন বলেন,‘একজন স্বামী ও বাবা হিসেবে আমি গর্বিত। ছেলের সঙ্গে মায়ের পড়ার সময় অবাক হয়েছিলাম। ভাবনা ছিল পারবে কি না। অথচ সব শঙ্কা দূর করে আর দশজনের মত রাকিবের মাও ভালো ফলাফল নিয়ে পাস করলো।