বৃহস্পতিবার, ২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

ইন্টারনেটের নিষিদ্ধ জগত ‘ডিপ ওয়েব’ সম্পর্কে আপনার যা অজানা

সেরাকণ্ঠ ডট কম :
জুলাই ২, ২০১৭
news-image

ইন্টারনেট দুনিয়ার এক অজানা অন্ধকার অধ্যায়ের নাম ‘ডিপ ওয়েব’। ডিপ ওয়েবের আরেকটি অংশ হচ্ছে ডার্ক ওয়েব বা ডার্কনেট। এই অন্ধাকার জগতটিকে ‘ইনভিজিবল ওয়েব’, ‘হিডেন ওয়েব’ ও ‘ব্ল্যাক ইন্টারনেট’ নামেও ডাকা হয়। মাদক, ভাড়াটে খুনি, ছিন্নমূল মানুষের ওপর পৈশাচিক গবেষণা, অস্ত্র বিক্রি, ক্রেডিট কার্ড ইনফরমেশন বিক্রি, বেটিং বা ম্যাচ ফিক্সিং স্পট, আইএস, সিআইএ, আলকায়েদা, উইকি লিকসসহ অজানা অসংখ্য কাজ করা হয় ডিপ ওয়েবের মাধ্যমে। ডিপ ওয়েব নামকরনের মূল কারণ হচ্ছে সাইবারস্পেসে এর অসীম গভীরতা যাকে মহাকাশের ব্ল্যাকহোলের সাথে তুলনা করা যায়। দি গার্ডিয়ানের তথ্যমতে আপনি গুগলের মত জায়ান্ট সার্চ ইঞ্জিন ব্যবহার করেও ইন্টারনেট জগতের মাত্র ০.০৩% শতাংশের দেখা পান, বাকিটা রয়ে যায় আপনার দৃষ্টির অন্তরালে। ঘটনাটি কিন্তু বড়ই রোমাঞ্চকর। ডিপ ওয়েব সম্পূর্ণ ভাবে অদৃশ্য এক জগত যেখানকার অভ্যন্তরে প্রবেশ করতে চাইলে আপনাকেও হয়ে যেতে হবে অদৃশ্য, যার না নাম আছে না রয়েছে ঠিকানা, যে ধরা ছোঁয়ার বাইরে এক অদৃশ্য সত্তা। এক আলাদা অস্তিত্ব সম্পর্কে শুধু তাদের অনুভব করা সম্ভব যারা এই জগতের অভিজ্ঞ বাসিন্দা। ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে শুরু হওয়া এই ডিপ ওয়েবসাইট আজ পর্যন্ত কোনভাবেই আইনের আওতায় অথবা নিয়ন্ত্রণাধীনে আসেনি।

কিভাবে ডিপ ওয়েবে প্রবেশ করা যায়?

ডিপ ওয়েবের নিষিদ্ধ জগতে যে কেউ চাইলেই প্রবেশ করতে পারবে না। আগেই বলা হয়েছে গুগল বা ফায়ারফক্সের মত সার্চ ইঞ্জিনের সহায়তা নেয়া এখানে পুরো মাত্রায় হবে একটি ব্যর্থ প্রচেষ্টা। ডিপ ওয়েবে প্রবেশ করতে চাইলে জানা থাকা চাই ডিপ ওয়েব সার্চ ইঞ্জিন অথবা ডিপ ওয়েব ব্রাউজার সম্পর্কে। ডিপ ওয়েবে প্রবেশের ক্ষেত্রে সবচেয়ে জনপ্রিয় ব্রাউজার হচ্ছে ‘Tor’। ২০১৪ সালের আগস্ট মাসের একটি সমীক্ষায় দেখা যায় জনসাধারণের মাঝে টর ব্রাউজার ব্যাপকভাবে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এবং তা ডাউনলোড করছে এমন মানুষের সংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়েছে। এর কারণ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সাধারণ জনসাধারনের উপর ও তাদের ওয়েবে আদান-প্রদান করা তথ্যের উপর মাত্রাতিরিক্ত নজরদারি করাকে দায়ী করা হয়। সে সময় গোয়েন্দা সংস্থার ব্যক্তি স্বাধীনতার উপর হস্তক্ষেপ ও ওয়েব ট্রাফিকের উপর নজরদারি জনসাধারণকে ডিপ ওয়েব ব্যবহারের প্রতি নির্ভরশীল করে তোলে। নিজেদের গোপনীয় তথ্য সংরক্ষণ খুব ভালোভাবেই করা যাচ্ছিল ডিপ ওয়েবের অদৃশ্য মায়াজাল ব্যবহার করে।

আপনি কি সার্চ করছেন, আপনার আইপি অ্যাড্রেস কি, আপনার জিও লোকেশন সবকিছুই আন্ট্রেসেবল। আপনাকে খুঁজে বের করা অসম্ভবের কাছাকাছি। প্রত্যেক মানুষের কিছু কমন সার্চ হ্যাবিট রয়েছে যা ফরেনসিক এক্সপার্ট অথবা আইটি এক্সপার্টরা প্রোফাইলিং করতে পারে। যেভাবে গুগল বা ফেসবুক আপনার ইন্টারেস্ট বলে দেয় যা আপনার কুকি হিস্টোরিতে খুঁজে পাওয়া যায়। কিন্তু ডিপ ওয়েবে ‘Tor’ ব্রাউজার ব্যবহার করে আপনি সচরাচর কি সার্চ করেন তা নির্ধারণ করা সম্ভব নয়। তাই যারা এই ডিপ ওয়েব ও ‘Tor’ ব্রাউজার সম্পর্কে জানে তারা এটি ব্যবহার করতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে।

ডিপ ওয়েবে যেতে প্রথম প্রয়োজন ‘Tor’ ব্রাউজার

নর্মাল ব্রাউজার অ্যাড্রেস যেভাবে ব্যবহার করেন একই ভাবে ডিপ ওয়েবের ব্রাউজার অ্যাড্রেস খুঁজে বের করতে পারবেন। খালি টাইপ করতে হবে যা আপনি খুঁজছেন আর আপনার সামনে চলে আসবে অগনিত ডিপ ওয়েব সাইটস। ডিপ ওয়েবের সকল সাইটের ডোমেইন .onion ডোমেইন নামে পরিচিত। অর্থাৎ ওয়েবসাইট প্রোভাইডার ও ইউজার উভয়ই নাম পরিচয়হীন, অজ্ঞাত। যাদের ট্র্যাক করা প্রায় অসম্ভব। কিছু ডিপ ওয়েব .onion সাইট দেখা যাবে এই ঠিকানায়।

কিভাবে সৃষ্টি হয়েছে ডিপ ওয়েব?

বারবার অদৃশ্য জগত বা অদৃশ্য মানব এসব শব্দের ব্যবহারে আপনার যদি মনে হয় ডিপ ওয়েব জগতটি বেআইনি কাজ ও অপরাধের আঁতুড় ঘর, তাহলে আপনার ধারনাকে পুরোপুরি অস্বীকার করার কোন উপায় নেই। অপরাধ প্রবণতা ও বে-আইনি পণ্যের অবাধ বিচরণ রয়েছে ডিপ ওয়েবের অন্ধকার জগতে। উদাহরণ হিসেবে চাইল্ড পর্ণ গ্রাফি ভিডিও, ড্রাগসের ব্যবসায় এর কথা উল্লেখ করা যায়। তবে প্রযুক্তির ভালো ব্যবহারও কিন্তু সম্ভব। মূলত ডিপ ওয়েব আপনার জ্ঞান ভান্ডার ও অভিজ্ঞতাকে এমন ভাবে সমৃদ্ধ করবে যার চিহ্ন আপনি পাবলিক ওয়ার্ল্ড ওয়েবে কোন দিনও খুঁজে পাবেন না।

চলুন জেনে নেওয়া যাক মানুষ কিসের খোঁজ করে ডিপ ওয়েবে?

১. মেইল দিয়ে মারিজুয়ানা অর্ডার

গাঁজার নৌকা পাহাড়তলি যায়-এই অদ্ভুত গানটি তো শুনেছেন? ঠিক তেমনই আপনার গাঁজার রাজ্যে স্বাগতম জানাতে পারে ডিপ ওয়েব। কোন লুকোচুরি নেই, নেই ঠাণ্ডার মাঝে ঝুঁকি নিয়ে কোন ড্রাগ ডিলারের জন্য অপেক্ষা করার ঝামেলা, নেই কোন দর কষাকষি বা নিম্নমানের আশংকা। অর্ডার করেই ঘরে বসে নিজের পছন্দমত পরিমাণে নির্দিষ্ট দামে পাওয়া যাচ্ছে এসব। দ্রুতই পেয়ে যাচ্ছে গোল্ডেন নাগেট নামে কুখ্যাত এই মাদক। ভাবছেন কি করে এসব মাদক পৌঁছায়? পৌঁছে যাচ্ছে কোন নির্জন জায়গায় ড্রপ আউট কুরিয়ারের মাধ্যমে অথবা ডিএইচএল-এর মত কুরিয়ার সার্ভিসে (অবশ্যই ভ্যাকুয়াম সিলড প্যাকে বহু প্যাকিং এর ছদ্মবেশে)। গ্রাহকের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে ড্রপ আউট পয়েন্টের জিপিএস লোকেশন। ভাবছেন কিভাবে পেমেন্ট করে ডিপ ওয়েবে? তার জন্য ব্যবহৃত হয় বিট কয়েন পলিসি। এটি একটি আনট্রেসেবল অনলাইন পেমেন্ট পদ্ধতি।

২. সিল্ক রোড

বড় বড় অনলাইন মার্কেট আমাজন বা ই-বেয় এর সাথে তো কম বেশি সবাই পরিচিত। ঠিক তেমনি ডিপ ওয়েব এর বিশাল অনলাইন ড্রাগ ও কেমিক্যাল মার্কেট হচ্ছে ‘সিল্ক রোড’। যে কোন কেমিক্যাল বা ড্রাগ অর্ডার করে পেমেন্ট করছে বিট কয়েনে। কিছুদিনের মধ্যে পৌঁছে যাচ্ছে আনট্রেসেবল প্যাকেজ। শুধু ড্রাগ বা ক্যামিকেল নয়, সিল্ক রোডে পাওয়া যায় না এমন কিছুর সম্ভবত অস্তিত্ব নেই। অদৃশ্য ক্রেতা-বিক্রেতার সবচেয়ে জনপ্রিয় মিলনস্থল হচ্ছে সিল্ক রোড। এখানে পণ্য বিনিময়ের সাকসেস রেট ৯৭% শতাংশ। যে কোন জিনিস প্রাপ্তির জন্য এরা এমন একটি সিস্টেম ডেভেলপ করেছে যে তাদের বিশ্বাসযোগ্যতা অনেকটা কিংবদন্তীর রূপ ধারণ করেছে।

৩. খুনি ভাড়া পাওয়া যায়!

ভাবছেন ভুল শুনলেন নাকি? না আপনি ঠিকই শুনেছেন। ডিপ ওয়েবে খুনিও ভাড়া করা যায়। আপনি কারো বেইমানিতে অসন্তুষ্ট, আপনার গার্ল ফ্রেন্ড বা স্ত্রীর উপর ক্ষিপ্ত, কোন সাংবাদিক অথবা ব্যবসায়িক প্রতিদ্বন্দ্বীকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে চাইছেন। জনাব আপনি ঠিক জায়গাতেই এসেছেন যার নাম ডিপ ওয়েব সাইট। আপনার টাকা আপনাকে দেবে ক্ষমতা। শুনতে নাটকীয় বা ভয়াবহ শুনালেও এসবই সত্যি। কোন কাল্পনিক গল্পের অস্তিত্ব এখানে নেই। কন্ট্রাক্ট কিলিং এর সবচেয়ে দামী ডিপ ওয়েবসাইটের মধ্যে White Wolves ও C’Thulhu এর নাম রয়েছে।

৪. ব্যাটারি বুটলেগিং

ব্যাটারি বুটলেগিং এমন এক অদৃশ্য মানব দ্বারা সৃষ্ট যাকে ডিপ ওয়েবে সবাই চিনে DANGLER নামে। হাস্যকর হলেও সত্যি DANGLER চুরি-ডাকাতির ব্যাপারে এক অসামান্য প্রতিভা। গ্রাহক এমন কিছু পেতে চাইছেন যা কেনা সম্ভব নয় বা সেটি পাওয়াও রীতিমত অসম্ভব; ঠিক সেটি চুরি করে হোক বা ডাকাতি করে হোক গ্রাহকের হাতে পৌঁছে দিবে। ডিপ ওয়েবে চুরি ডাকাতিরও অনেক পেজ খুঁজে পাওয়া যায়। মজার ব্যাপার হচ্ছে Dangler কে কিছু চুরি করার নির্দেশ দিয়ে পরবর্তীতে পাওনা পরিশোধ না করলে সেই চুরি করা পণ্যটি তার লিস্টে দেওয়া থাকবে যেন অন্য যে কেউ সেটা নিতে পারে। এই পর্যন্ত তার চুরি করা পণ্যের লিস্ট ও তার অর্জনের যে ইতিহাস দেওয়া আছে তার ডিপ ওয়েব সাইটে তা যথেষ্ট জনপ্রিয়।

৫. মানুষের উপর গবেষণা

ভাবতেও শিউরে উঠতে হয় যে ডিপ ওয়েবে এমন সাইটও রয়েছে যেখানে মানুষের উপর গবেষণার কথা বলা হয়ে থাকে। সাধারণত ছিন্নমূল মানুষের উপর এই ধরনের মেডিকেল এক্সপেরিমেন্ট চালানো হয়ে থাকে। এই সকল মানুষের খোঁজ করার কেউ নেই। তাই গবেষণায় এদের মৃত্যু হলেও কারো কিছুই এসে যায় না। এটি এক পারফেক্ট ক্রাইম ঠিক যেন এক পৈশাচিক গল্প; তবু বাস্তব। রাস্তা থেকে তুলে আনা এসব মানুষ হয় স্যাডিজমের শিকার।

গবেষকরা যেভাবে নিজেদের পরিচয় তুলে ধরে

‘আমরা সবাই মেডিকেল পার্সোনেল। আমাদের টিমে রয়েছে ৩ জন নার্স, ৬ জন মেডিকেল শিক্ষার্থী, ২ জন ইন্টার্ন ও ২ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। আমরা আমাদের অবসর সময়ে গবেষণা চালাই। আমাদের টেস্ট সাবজেক্ট নির্ধারিত সেলে বন্দী অবস্থায় থাকে, প্রয়োজন অনুসারে খাবার ও পানি সরবরাহ করা হয়। পুষ্টি গুন বিচারের প্রশ্ন ওঠে না কারণ কেউই তারা বাঁচবে না।’ এই বিতর্কিত সাইটের অস্তিত্ব নিয়ে অনেক প্রশ্ন থাকলেও বিবেক বোধ ও মনুষ্যত্ববিহীন এদের সম্পর্কে সাধারণ মানুষ কিছু বলতে বা ভাবতেও ভয় পায়।

৬. অস্ত্র বিক্রির বড় প্ল্যাটফর্ম

ডিপ ওয়েবের একটি সাইটের নাম ইউরো আর্মস। যেখানে যে কোন অস্ত্রই খুঁজে পাওয়া সম্ভব। অর্ডার করলে তা পৌঁছেও যাবে গ্রাহকের দরজায়। তবে এই সার্ভিসটি বর্তমানে শুধু ইউরোপে পাওয়া যায়। ইউরো আর্মসের মত সাইট অবশ্যই নিরাপত্তায় হুমকি স্বরূপ।

৭. ক্রেডিট কার্ড ইনফরমেশন

অনলাইনে কেনা কাটায় সবচেয়ে আগে প্রয়োজন পড়ে একটি ভ্যালিড ক্রেডিট কার্ড ও সোশ্যাল সিকিউরিটি নাম্বারের। ভাবুন আপনি ছুটি কাটাতে গিয়েছেন, আপনার ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করতে গিয়ে জানলেন আপনার কার্ডে যথেস্ট পরিমাণে ব্যালেন্স নেই। কারণ অন্য কেউ আপনার কার্ড ব্যবহার করে টাকা তুলে নিয়েছে। কার্ড ক্লোনের এই ঘটনা যেন নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার। এই ধরনের ডিপ ওয়েব সাইট যারা কার্ড ফ্রডের সাথে যুক্ত, ডিপ ওয়েবে যাদের বিশেষ সুনাম রয়েছে। এমন একটি .onion ডিপ ওয়েবসাইটের নাম আটলান্টিক কার্ডিং। তাদের প্রিমিয়াম সার্ভিসে রয়েছে ইনফিনিট কার্ড ইনফরমেশন। যত বেশি মূল্য তত বেশি বিট কয়েন। জেনারেল সার্ভিস পাওয়া যায় ৮০ ইউএস ডলারে। আর কি লাগে?

৮. বেটিং বা ম্যাচ ফিক্সিং স্পট

বাজী ধরতে চাইছেন বড় অংকের? ভাবছেন ম্যাচ ফিক্স করবেন? তার জন্যও রয়েছে ডিপ ওয়েব সাইট। ঘোড়া দৌড় থেকে শুরু করে যাবতীয় ম্যাচ ফিক্সিং এর জন্য গড়ে উঠেছে আলাদা আলাদা ওয়েবসাইট। কেমন করে কাজ করছে তারা তা যারা জড়িত তারাই বলতে পারবেন। তবে লেনদেনের মাধ্যম আবারও সেই বিট কয়েন।

৯. লুকোনো উইকি

এতক্ষণ ডিপ ওয়েব .onion সাইটস সম্পর্কে যা বলা হয়েছে তা বিশাল আইসবার্গের ক্ষুদ্র অংশ মাত্র। গুপ্তধন তো লুকিয়ে রয়েছে হিডেন উইকিতে। ডিপ ওয়েব সম্পর্কে জানা অজানা সব রয়েছে এই ডিপ ওয়েব পোর্টালে। উইকিপিডিয়া যদি হয় তথ্য ভাণ্ডার তবে হিডেন উইকি ডিপ ওয়েবের তথ্যের মহা সমুদ্র। এতক্ষণ ধরে যা বলা হয়েছে তা এই ডিপ ওয়েব পোর্টাল থেকেই সংগ্রহ করা।

ডিপ ওয়েবে এক সাইকোরর গল্প

ডিপ ওয়েবে বিচরণ করা এক সাইকোর তথ্য তুলে ধরছি যার কথা হিডেন উইকিতে উল্লেখিত আছে। বড়লোক এক ইউরোপীয় ডাক্তার ডিপ ওয়েবে বিজ্ঞাপন দিয়েছিলেন তিনি লাইভ সেক্স টয় বিক্রি করেন। তিনি সত্যি জ্যান্ত মানুষ বিক্রি করছিলেন। তিনি পূর্ব ইউরোপের বিভিন্ন অনাথ আশ্রম ঘুরে এতিম মেয়ে শিশুদের সংগ্রহ করে তাদের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ কেটে ফেলতেন, তাদের দাঁত উপড়ে নিতেন, সার্জারি করে তাদের অন্ধ বোবা কালায় রূপান্তরিত করতেন, তাদের গোপনাঙ্গকে সঙ্কুচিত করতেন এবং মানব সেক্স ডল হিসেবে বিক্রি করতেন। তাদের অঙ্গ প্রত্যঙ্গ দিয়ে লুপ তৈরি করে সো-পিস হিসেবে ব্যবহার করতেন। রাতের ঘুম হারাম করতে এই একটি রেফারেন্স যথেষ্ট। নৃশংসতার এই ঘটনা মিষ্টি ভাষায় লেখা হলেও আসল বিবরণ আরও ভয়াবহ।

১০. বর্তমান পরিস্থিতি

যদিও বলা হয়েছিল যে ডিপ ওয়েবে সহজে কেউ ঢুকতে পারে না। তবে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা একটু হলেও ডিপ ওয়েবে নাক গলাতে সমর্থ হয়েছে। যার প্রমাণ পাওয়া যায় ২০১৪ সালের আগস্টে যে সময় প্রায় ৫০% শতাংশ লুকোনো ডিপ ওয়েবসাইট অদৃশ্য হয়ে গিয়েছিল। একই ধরণের আরেক অপারেশনে যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক গ্রেফতারের শিকার হয় এক আইরিশ এরিক ওয়েন মারকুইস; যাকে ডিপ ওয়েব ব্যবহার করে শিশু পর্ণ ছড়ানোর অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়। মারকুইস ডিপ ওয়েবের সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের একজন যে কিনা ফ্রিডম হোস্টিং নামক ইনফ্রাস্ট্রাকচারের প্রতিষ্ঠাতা যা ডিপ ওয়েব এর অনেক .onion ওয়েবসাইটকে হোস্টিং সুবিধা দিয়েছে। এই কাজে সারা ইউরোপ জুড়ে ৫৫০টি সার্ভার ব্যবহৃত হয়েছে যা যে কাউকে ডিপ ওয়েবসাইটে স্পেস ব্যবহারের সুযোগ করে দিয়েছে।

মারকুইসের পরিবার তার গ্রেপ্তারের প্রতিবাদ জানিয়ে বলে সে তো শুধুমাত্র ওয়েব স্পেস ভাড়া দিয়েছে। কোন অপরাধ বা অবৈধ কর্মকাণ্ডে সে যুক্ত নয়। জানা যায় এফবিআই এর টেকনিক্যাল টিম টর ওয়েবসাইট হ্যাক করে মারকুইসকে ট্র্যাক করে গ্রেফতার করে। এই হ্যাকের কাজে ব্যবহৃত হয় ম্যালওয়্যার যা পিএইচপি, মাইএস্কিউএল, অ্যাপাচি দিয়ে চালানো সফটওয়্যারকে হ্যাক করতে পারে যার কারণে ফ্রিডম হোস্টিং এর সার্ভারকে হ্যাক করা সম্ভবপর হয়। ঘটনার পিছে রটনা যাই হোক না কেন এখনো পর্যন্ত ডিপ ওয়েব অজানা রহস্য হয়েই রয়েছে; যার প্রাইভেসি ও সিকিউরিটি ভাঙা খুব একতা সহজ না। এ সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানা যাবে উইকিপিডিয়াতে।

ডেইলি-বাংলাদেশ.কমের সৌজন্যে ও ঈষৎ সম্পাদিত।