ঢাকার মুঘল দুর্গ-প্রাসাদ টাকশাল-সরাইখানা
ঢাকায় মুঘল আমলের কীর্তির অভাব নেই। ঢাকা শহরে পুরাকীর্তি হিসেবে যেসব স্থাপনাকে শনাক্ত করা যায়, তার মধ্যে মুঘল আমলের কীর্তি অনেক। ঢাকায় রাজধানী থাকার সময় (১৬০৮-১৭১৭) তো বটেই, তার পরেও কোম্পানি শাসন চালু হওয়া পর্যন্ত সময়কালের কীর্তিগুলো মুঘল আমলের কীর্তি মনে করা হয়।
ঢাকায় মুঘল আমলে রাজধানী ছিল ১০০ বছরের মতো; এরপরও ১৭১৭ থেকে ১৭৫৭ পর্যন্ত নবাবি আমলের ঢাকায় দালানকোঠা, রাস্তাঘাট এসব নির্মিত হয়েছিল। ১৭৬৫-তে কোম্পানি শাসন চালু হয়। ১৮৫৭ সালের সিপাহি বিদ্রোহের পর সরাসরি ব্রিটিশ শাসন প্রবর্তিত হয়। ১৯৪৭ পর্যন্ত সেই শাসন চলে। মুঘল, কোম্পানি ও ইংরেজ আমলে ঢাকার গুরুত্ব কখনো বেড়েছে কখনো কমেছে। পুরোটা সময়ের নির্মাণ নিদর্শন ছড়িয়ে আছে শহর ঢাকার অলিগলিতে। তবে সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ টিকে থাকা নিদর্শনগুলো মুঘল আমলের।
‘বাহারিস্তান-ই-গায়বি’র বর্ণনা থেকে জানা যায়, রাজমহল, গৌড় ও ঘোড়াঘাটসহ কয়েকটি মাত্র জায়গায় ঢাকার দুর্গের মতো দুর্গ ছিল। এ দুর্গ রাজধানী হওয়ার আগে থেকেই ঢাকায় ছিল। আনুমানিক ১৬০২-১৬০৩ সালের দিকে মানসিংহের সময়ে এটি নির্মিত হয়েছিল বলে মনে করা হয়। এ দুর্গের ভেতরে প্রথম সুবাদার ইসলাম খান (১৬১০ থেকে ১৬১৩ সাল পর্যন্ত) অবস্থান করেছিলেন বলে জানা যায়। পুরোনো সেই দুর্গকে সংস্কার করে নেওয়া হয়েছিল মাত্র। নলিনীকান্ত ভট্টশালীর মতে, দুর্গটি সংস্কার করতে দুই সপ্তাহ সময় লেগেছিল। দুর্গটির ভেতরে ঢোকা ও বের হওয়ার পথ দুটো ছিল পূর্ব ও পশ্চিম দিকে। অনেক সুবাদারের বাসভবন ও অফিস, টাকশাল, মসজিদ প্রভৃতি ছিল এ দুর্গের ভেতরে।
বখশিবাজার, দেওয়ান বাজার প্রভৃতি জায়গায় ছিল মন্ত্রী ও আমলাদের আবাসিক এলাকা। চকবাজারে ছিল বাদশাহী বাজার। পিলখানায় হাতিশাল, মাহুতটুলীতে মাহুতদের আবাসস্থান ছিল। উর্দু রোড, আতিশখানা, নবাবগঞ্জ, সুজাতপুর, মহল্লা চিশতিয়া প্রভৃতি ছিল মুঘল ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ জায়গা। বর্তমান হাইকোর্ট এলাকায় অবস্থিত ছিল বাদশাহি বাগান ‘বাগ-ই-বাদশাহি’। আজাদ আল হোসায়নির ‘নওবাহার-ই-মুর্শিদকুলি খানি’, ডক্টর আহমদ হাসান দানির ‘ঢাকা : এ রেকর্ড অব চেঞ্জিং ফরচুনস’, যতীন্দ্র মোহন রায়ের ‘ঢাকার ইতিহাস’ প্রভৃতি গ্রন্থে মুঘল যুগের ঢাকার এসব এলাকার একটি চিত্র পাওয়া যায়।
ঢাকার ইতিহাসে প্রথমবারের মতো টাকশাল স্থাপিত হয়েছিল মুঘল আমলে। এর পরে অবশ্য আর কখনোই ঢাকায় নতুন করে টাকশাল স্থাপিত হয়নি। স¤্রাট জাহাঙ্গীরের নামানুসারে সুবাদার ইসলাম খানের আমলে ঢাকার নামকরণ হয়েছিল জাহাঙ্গীরনগর। ঢাকার প্রথম এবং শেষ টাকশালটিরও নাম ছিল জাহাঙ্গীরনগর টাকশাল। জাহাঙ্গীরের আমল থেকেই এখানে মুদ্রা তৈরি শুরু হয়েছিল। যেসব স¤্রাটের আমলের মুদ্রা এ টাকশালে তৈরি হওয়ার প্রমাণ পাওয়া গেছে তাঁদের নাম- জাহাঙ্গীর, শাহজাহান, আওরঙ্গজেব, আলমগীর-২, আহমদ শাহ, মোহাম্মদ শাহ, জাহান্দার শাহ ও শাহ আলম।
এ সম্রাটদের আমলে জাহাঙ্গীরনগর টাকশালে তৈরি রুপার গোলাকার মুদ্রা পাওয়া গেছে। মুদ্রাগুলোর ওজন সাধারণভাবে ১১.৬০ গ্রাম ছিল বলে মনে করা হয়। অবশ্য বর্তমানে আর সেই ওজন নেই। ক্ষয় হয়ে এগুলোর ওজন বর্তমানে মোটামুটিভাবে ১১.০০ গ্রাম হয়েছে। আকবরের আমলে প্রবর্তিত ইলাহি সাল ও মাসের নাম তাঁর পরবর্তীকালের জাহাঙ্গীর ও শাহজাহানের আমলের মুদ্রাতেও পাওয়া যায়। এসব মুদ্রায় কখনও কখনও তির, মিহির, খুরদাদ, আমারদাদ-এর মতো ইলাহি মাসের নাম যেমন পাওয়া যায়, আবার ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ’ উৎকীর্ণ মুদ্রাও পাওয়া যায়।
এ নামের দুটি দুর্গের বর্ণনা ও দুর্গটির অবস্থান চিহ্নিতকারী মানচিত্র সন্নিবেশিত আছে অধ্যাপক আহমদ হাসান দানির ‘ঢাকা : এ রেকর্ড অব চেঞ্জিং ফরচুনস’ গ্রন্থে। মানচিত্রটি মুঘলপূর্ব ও মুঘল যুগকে নির্দেশ করেছে। মির্জা নাথানের ‘বাহারিস্তান-ই-গায়েবি’তে বুড়িগঙ্গা নামের কোনো নদীর নাম নেই। বরং আছে দুলাই নদীর নাম। অধ্যাপক আহমদ হাসান দানি তাঁর উপরোক্ত গ্রন্থে (অনুবাদ : ২০০৫, পৃষ্ঠা : ১৪) উল্লেখ করেছেন যে, বুড়িগঙ্গার পুরোনো নাম দুলাই। সেই দুলাই নদীর একটি শাখা বা খাল ডেমরার দিকে প্রবাহিত ছিল। এ খালটির দু’ধারে নদীসংলগ্ন উৎসমুখের কাছে বেগ মুরাদের দুর্গ নামের দুটি দুর্গ ছিল। সুবাদার ইসলাম খান এ দুটি দুর্গের একটির তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব দিয়েছিলেন ইহতিমাম খানের ওপর, অন্যটির দায়িত্ব ছিল মির্জা নাথানের ওপর। ঢাকার যোগাযোগ, অর্থনীতি, বাণিজ্য ও সামরিক ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ছিল ধোলাইখাল। এটির পশ্চিম প্রান্ত বাবুবাজারের কাছে এবং পূর্ব প্রান্ত লোহারপুলের নিচ দিয়ে মিশেছিল বুড়িগঙ্গায়।
বাদশাহী দুর্গ যেখানে অবস্থিত ছিল সেখানে কোম্পানি আমলের শুরুর দিকে কোতোয়ালি থানা স্থাপিত হয়েছিল। পরে কোম্পানি আমলেই ১৮৩৬ সালে এখানে জেলখানা স্থাপিত হয়েছিল। সেই জেলখানায় দক্ষিণ ও পূর্ব দিক দিয়ে চলে যাওয়া সড়কের নাম হয়েছিল জেল রোড।
কোতোয়াল সাহেব থাকতেন জেলখানার পূর্ব দিকের একটি বাড়িতে। সেই বাড়িটি কোতোয়াল সাহেবের বাড়ি নামে পরিচিতি পেয়েছিল।
ধানমন্ডি ঈদগাহ
ঢাকা শহরের ধানমন্ডি এলাকায় ৬/এ এবং ৭/এ সড়ক দুটির মাঝখানে মুঘল আমলের একটি ঈদগা রয়েছে। এখন সাধারণ্যে সেটি ধানমন্ডি ঈদগা নামে পরিচিতি পেলেও প্রকৃত নাম সেটি ছিল না। ঈদগাকে ঘিরে রাখা নির্মাণ কাঠামো আধুনিক হলেও তা মুঘলশৈলীর আদলেই করা হয়েছে। তবে সংস্কারের আগেও মেহরাবসহ দেয়ালের কিছু অংশ কোনো রকমে টিকে ছিল। ঈদগাটির নির্মাণের তারিখ পাওয়া যায় মেহরাবের ওপরের শিলালেখ থেকে। সেই শিলালেখ থেকে জানা গেছে যে, ১০৫০ হিজরি মোতাবেক ১৬৪০ সালে সুবাদার শাহ শুজার দেওয়ান মির আবুল কাসেম এ ঈদগাটি নির্মাণ করেছিলেন।
মুঘল নৌবাহিনীর তত্ত্বাবধায়ক মির্র্জা মুকিম মতিঝিল-দিলকুশা এলাকায় এক বিশাল সরাইখানা স্থাপন করেছিলেন মিরজুমলার (১৬৬০-১৬৬৩) আমলে। হাকিম হাবিবুর রহমান বিখ্যাত গ্রন্থ ‘আসুদগানে ঢাকা’-তে উল্লেখ করেছেন যে, সেই সরাইখানা এলাকার পুকুরের নাম ছিল মতিঝিল। মালিকানা বদল হয়ে নবাব আবদুল গণির হাতে জায়গাটা আসার পর উনবিংশ শতকের শেষের দিকে একটি বাগানবাড়ি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন তিনি। সেই বাগান বাড়ি ব্রিটিশ সরকার ১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গের পর প্রাদেশিক শাসকের বাসভবনের জন্য অধিগ্রহণ করে। সাতচল্লিশের দেশবিভাগের পর এখানে গভর্নর হাউস এবং স্বাধীনতার পর রাষ্ট্রপতির বাসভবন প্রতিষ্ঠিত হয়, যা বঙ্গভবন নামে পরিচিত।
অনেকেই অনুমান করেন যে, পুরান ঢাকার শিয়া সম্প্রদায়ের ইমামবাড়া হোসেনি দালানের স্থানে মুঘল আমলে একটি ইমামবাড়া ছিল। জেমস টেলরের বর্ণনা থেকে উনবিংশ শতকের ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ উপাসনা কেন্দ্র হিসেবে হোসেনি দালানের নাম জানা যায়। এও মনে করা হয় যে নায়েব নাজিম জেসারত খাঁর সময়ে অষ্টাদশ শতকের মাঝামাঝি দিকে যে ইমামবাড়া নির্মিত হয়েছিল, সেটির বহু সংস্কারের পর হোসেনি দালানের বর্তমান আদলটি দাঁড়িয়েছে।
পাগলার পুল
মির জুমলার আমলে ১৬৬০ সালে ঢাকার মূল শহরের বাইরে পাগলায় ইটের তৈরি একটি পাকা পুল নির্মিত হয়েছিল। যদিও প্রথম আরাকান যুদ্ধের সময় ইংরেজরা পুলটি ভেঙে ফেলেছিল, কিন্তু এখনও এ পুলের ভাঙা অংশ এ সড়কের পাশে দেখা যায়।
মুঘল আমলের বাদশাহী বাগানে বাংলার সুবাদার ইসলাম খাঁ চিশতিকে সমাহিত করা হয়েছিল বলে ‘বাহারিস্তান-ই-গায়বি’তে মির্জা নাথান উল্লেখ করেছেন। অসুস্থ সুবাদার ভাওয়াল এলাকায় প্রাণত্যাগ করেছিলেন। পরবর্তীতে তার দেহ সেখান থেকে ফতেপুর সিক্রিতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে জাহাঙ্গীরের আমলে সমাধিসৌধ তৈরি করা হয়। এই বাগে বাদশাহী বা বাদশাহী উদ্যানের সামধিটির জৌলুস পরে বেড়ে যায়। কিন্তু সেখানে যে ইসলাম খাঁর সমাধি নেই তা নিশ্চিত। এখানে অনেক পরে হাইকোর্ট ভবন নির্মিত হয়েছে।
১৬৬১ সালে মির জুমলার আমলে ঢাকার উপকণ্ঠের টঙ্গীতে ইটের সাহায্যে একটি পাকা পুল নির্মিত হয়েছিল। পাগলার পুলের মতো এ পুলটিও প্রথম আরকান যুদ্ধের সময় ইংরেজরা ভেঙে ফেলেছিল। মুঘল আমলে ঢাকার সড়ক যোগাযোগের ক্ষেত্রে পুলটির বিশেষ গুরুত্ব ছিল।
মুঘল ঢাকার একটি গুরুত্বপূর্ণ পুল ছিল এটি। এ সেতুটির নিচ দিয়ে পা-ু নদীর ধারা প্রবাহিত হতো। এটির অবস্থান ছিল বর্তমান হাইকোর্ট এলাকার পাশের ঢাকা গেট বা মির জুমলার তোরণের খানিকটা উত্তরে। পুলটির এখন অস্তিত্ব নেই।
পুরান ঢাকার নারিন্দায় ধোলাই খালের ওপরে ১৬৬৪ সালে খিলানের সাহায্যে এ পাকা সেতুটি নির্মিত হয়েছিল। হায়াত ব্যাপারী এটির নির্মাতা ছিলেন বলে জানা যায়। ‘তাওয়ারিখে ঢাকা’ গ্রন্থে মুনশি রহমান আলি তায়েশ (১৮২৩-১৯০৮) এ পুলের নির্মাণ সম্পর্কে বিবরণ দিয়েছেন। সংস্কারের মাধ্যমে উনবিংশ শতকেও এটি ভালোভাবে টিকে ছিল। তবে বিংশ শতকে ক্রমে খাল ভরাট হয় এবং পুলটি নিশ্চিহ্ন হয়।
চকবাজারের দক্ষিণ দিকে বুড়িগঙ্গা নদীর খুব কাছে বড় কাটরা নামের মুঘল আমলের এ বিশাল প্রাসাদটি অবস্থিত। ঢাকায় টিকে থাকা হাতে গোনা মুঘল আমলের প্রাসাদের মধ্যে এটি একটি। ইট ও চুন-সুরকি ব্যবহার করে খিলানের সাহায্যে এ প্রাসাদটি নির্মিত হয়েছিল। প্রাসাদটি তিন তলাবিশিষ্ট। এর ফটকও খুব জঁাঁকজমকপূর্ণ ছিল। সুবাদার শাহ মোহাম্মদ সুজার আমলে (১৬৩৯-১৬৬০) তাঁর আদেশে ১৬৪৪ খ্রিস্টাব্দে দিওয়ান মির কাশিম এ প্রাসাদ নির্মাণ করেছিলেন। শিলালেখ সূত্রে এবং মুনশী রহমান আলী তায়েশের ‘তাওয়ারিখে ঢাকা’র বিবরণ থেকে এসব তথ্য জানা যায়। প্রাসাদটি নির্মাণকালে দিল্লির স¤্রাট ছিলেন শাহজাহান।
ছোট কাটরা
মুঘল ঢাকার প্রাসাদগুলোর মধ্যে এটি দ্বিতীয় বৃহত্তম। শুধু বড় কাটরাই এর চেয়ে বড়। ইমামগঞ্জের কাছে, বুড়িগঙ্গার, বড় কাটরা ধারের প্রায় ২০০ মিটার পুবে প্রাসাদটি অবস্থিত। এ প্রাসাদ ১৬৬৩ সালে শায়েস্তা খান নির্মাণ করেছিলেন। প্রাসাদ প্রাঙ্গণের চম্পাবিবির মাজারটি আসলে কার তা নিয়ে মতভেদ আছে। কেউ বলেন এটি শায়েস্তা খানের স্ত্রীর এবং কেউ বলেন এটি তাঁর কন্যার। তবে জনশ্রুতি আছে যে, মাজারটির নির্মাতা শায়েস্তা খান। এ ছোট কাটরায় উনবিংশ শতকে একটি ইংরেজি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার তথ্য জানা যায়।
মুঘল আমলের এ দুর্গটির প্রকৃত নাম কিল্লা আওরঙ্গাবাদ। অসম্পূর্ণ এ দুর্গটির প্রকৃত নির্মাতার নাম নিয়ে মতভেদ আছে। সুবাদার শায়েস্তা খান এটি নির্মাণ করেছিলেন বলে ধারণা করা হয়। তবে সাধারণভাবে এ ধারণা প্রচলিত আছে যে, ১৬৭৮-১৬৭৯ সালের দিকে শাহজাদা আজম এটির নির্মাণ শুরু করেছিলেন। এটি একটি অনন্য মুঘল কীর্তি। দুর্গের প্রায় পেছনেই ছিল বুড়িগঙ্গা নদী। উঁচু দেয়াল ঘেরা এ দুর্গের উত্তর তোরণের চেয়ে দক্ষিণ তোরণটির বড় ও জাঁকজমকপূর্ণ। তিন তলা বিশিষ্ট এ তোরণটিতে সংস্কার হয়েছে। দুর্গটিতে একটি সুড়ঙ্গ ছিল, সেটির শুরুর অংশ এখনও দেখা যায়। সিপাহি বিদ্রোহের সময় (১৮৫৭ খ্রি.) লালবাগের কেল্লার দেশীয় সিপাহিদের নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছিল। এ বিদ্রোহের মাত্র দুই দশক পরেই এখানে এসেছিলেন ভারতীয় উপমহাদেশে প্রতœতত্ত্বের জনক স্যার আলেকজান্ডার কানিংহাম। তিনি লিখেছেন যে, এ দুর্গ পূর্ব-পশ্চিমে প্রায় ৬০৯ মিটার লম্বা ও উত্তর দক্ষিণে প্রায় ২৪৩ মিটার চওড়া। এ দুর্গের ভেতরে আছে দোতলা হাম্মামখানা (¯œানাগার), পরি বিবির মাজার, লালবাগ কেল্লা মসজিদ, জলাশয় প্রভৃতি। পরিবিবির মাজার একটি অপূর্ব সমাধিসৌধ। বর্গাকার এ সৌধের ভিত্তি নির্মিত হয়েছে রাজমহলের কালো পাথর দিয়ে। জয়পুরের শ্বেত মর্মর ও চুনারের বেলে পাথর ব্যবহার করে নির্মিত এ সৌধের ওপরে আছে একটি দৃষ্টিনন্দন গম্বুজ। ভারতীয় ও পারস্যরীতির অপূর্ব সংমিশ্রণ দেখা যায় এ ইমারতে। মূল দালানের চার কোনার চারটি আট কোনাকার মিনার আছে। ভেতরে ব্যবহৃত হয়েছে মুঘল আমলের টাইলস। পরিবিবির মাজার থেকে ৪০ মিটারের মতো পশ্চিম দিকে লালবাগ কেল্লা মসজিদ অবস্থিত। ধারণা করা হয় যে, ১৬৬৪ সালে সুবাদার শায়েস্তা খান এ মসজিদটি নির্মাণ করেছিলেন। তিন গম্বুজবিশিষ্ট এ মসজিদের পূর্ব দেয়ালে আছে তিনটি প্রবেশপথ, আর পশ্চিম দেয়ালে আছে তিনটি মেহরাব। চার কোনায় আছে চারটি আট কোনাকার মিনার।