ভারতীয় নারীরা গরুর মুখোশে কেন?
ভারতীয় নারীরা দেশটির বিভিন্ন জায়গায় গরুর মুখোশ পরে ছবি তুলছেন, যা নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে আলোচনা এখন তুঙ্গে। ভারতীয় সমাজে নারীর অবহেলা বা নিরাপত্তাহীনতার প্রকট চিত্রের বিরুদ্ধে এই অভিনব প্রতিবাদ। গো-রক্ষার নামে দেশটিতে যা ঘটছে, তা দেখেই কলকাতার অধিবাসী সুজাত্র ঘোষের (২৩) এই ফটোগ্রাফি প্রজেক্ট। এতে তার ছুঁড়ে দেওয়া প্রশ্নটি হলো, ভারতে কি মেয়েরা গরুর চেয়েও অধম?
দিল্লির ইন্ডিয়া গেটের কাছে, কলেজের ক্লাশরুমে, ট্রেনের কামরায়, এমনকি রাষ্ট্রপতি ভবনের সামনেও গরুর মুখোশ পরিয়ে তিনি মেয়েদের ছবি তুলেছেন। ছবি তোলার জন্য সুজাত্র তার বন্ধু এবং পরিচিতজনদেরকেই মডেল হিসেবে ব্যবহার করেছেন।
দুই সপ্তাহ আগে সুজাত্র ঘোষ তার এসব ছবি ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করতে শুরু করেন।ছবিগুলো প্রথম সপ্তাহেই ভাইরাল হয়।
দিল্লির ইন্ডিয়া গেটের সামনে গরুর মুখোশে নারী
সুজাত্র বিবিসিকে বলেন, “আমার দেশে মেয়েদের তুলনায় গরুকে যে এত বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়, সেটা দেখে আমি বিচলিত। এখানে একজন মেয়ে ধর্ষিত বা লাঞ্ছিত হওয়ার পর বিচার পেতে যে সময় লাগে, তার চেয়ে অনেক দ্রুত বিচার পায় একটি গরু, কারণ হিন্দুরা এই গরুকে পবিত্র মনে করে।”
ভারতে প্রতি পনের মিনিটে একজন নারী ধর্ষিত হয়। সুজাত্র বলেন, “এসব অপরাধের মামলা চলতে থাকে বছরের পর বছর। অথচ যখন একটি গরু জবাই করা হয়, তখন হিন্দু চরমপন্থী গোষ্ঠীগুলো গিয়ে তখনই সন্দেহভাজনদের ধরে পিটিয়ে মারে।”
“এই হিন্দু গোরক্ষা গোষ্ঠীগুলোর তৎপরতা এবং তাদের প্রভাবের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হিসেবেই তিনি এই অভিনব ফটোগ্রাফির ধারণা নিয়ে কাজ শুরু করেন।”
বিজেপি ক্ষমতাসীন হওয়ার পর থেকে ভারতে গোরক্ষা নিয়ে হিন্দুত্ববাদী চরমপন্থা প্রকট রূপ ধারণ করে। বিজেপি বলছে, গরু ভারতীয় হিন্দুদের কাছে খুবই পবিত্র এবং এই গরু রক্ষায় তারা নানা ধরণের কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে। গরু জবাই নিষিদ্ধ করা হয়েছে অনেক রাজ্যে। এখন গো হত্যার জন্য মৃত্যুদন্ডের বিধান করে একটি পার্লামেন্টে আইন পাশ করার কথাও ভাবা হচ্ছে।
কিন্তু ভারতের কোটি কোটি মুসলিম, খ্রীষ্টান এবং নিম্নবর্গের দলিত শ্রেণীর মানুষ গরুর মাংস খান। কাজেই বিজেপির এসব নীতির ফলে তারা এখন নানাভাবে নিগৃহীত হচ্ছেন।
গত দুই বছরে তথকথিত হিন্দু গোরক্ষকদের হাতে অন্তত ১২ জন নিহত হয়েছেন।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কোন প্রমাণ ছাড়া শুধুমাত্র গুজবের ওপর ভিত্তি করে মুসলিমদের ওপর এসব হামলা চালানো হয়। এমনকি গরুর দুধ পরিবহনের কারণে পর্যন্ত মুসলিমদের ওপর হামলা চালানো হয়।
সম্প্রতি নিউ ইয়র্কে এক সফরের সময় সেখানকার এক পার্টি শপ থেকে কিছু গরুর মুখোশ কেনেন সুজাত্র। সেখান থেকে ফিরে এসে তিনি এই ফটোগ্রাফী সিরিজের জন্য ছবি তুলতে শুরু করেন।
কিন্তু ভারতীয় গণমাধ্যমে যখন তার এই ফটোগ্রাফীর খবর বেরুলো, তখন পাল্টা প্রতিক্রিয়া আসতে শুরু করলো। তবে হুমকিতে ভীত নন সুজাত্র ঘোষ।
“অনেকেই আমাকে হুমকি দেয়া শুরু করে। কেউ কেউ এমন কথাও বলে, আমাকে আর আমার মডেলদের দিল্লির জামে মসজিদে নিয়ে জবাই করা উচিত। কিছু লোকতো দিল্লি পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করে। তারা বলে আমি নাকি দাঙ্গায় উস্কানি দিচ্ছি।”