শুক্রবার, ১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

তৃণমূলে মেলবন্ধনের উদ্যোগ আওয়ামী লীগে

সেরাকণ্ঠ ডট কম :
মে ২৭, ২০১৭

উচ্ছাস: আপাতত রাজপথে সক্রিয় কোনো কর্মসূচি না রেখে মাহে রমজানকে দল পুনর্গঠনের প্রস্তুতির উপযুক্ত সময় হিসেবে দেখছেন আওয়মাী লীগ নেতা-কর্মীরা। রমজানের ‘ইফতার রাজনীতি’ পুঁজি করে তৃণমূলে মেলবন্ধন সৃষ্টি করতে চান ক্ষমতাসীন দলটির নেতা-এমপি-মন্ত্রীরা। রাজধানীসহ মহানগরী ও জেলা-উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে ইতিমধ্যে শুরুও হয়েছে তোড়জোড়। গুরুত্ব বাড়তে শুরু করেছে তৃণমূল নেতা-কর্মী ও সাধারণ ভোটারদের। রমজানে ইফতার রাজনীতির পাাশাপাশি আগাম প্রচার-প্রচারণায় এগিয়ে থাকতে চায় আওয়ামী লীগ। দলের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে রোজার মাসজুড়েই থাকবে ইফতার আয়োজন। রোজার প্রথম দিন গণভবনে এতিম ও দুস্থদের সঙ্গে ইফতার করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ ছাড়া জোটের শরিকদের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তোলা এবং নতুন মিত্র খোঁজা হবে এবারের ইফতার রাজনীতিতে। সংশ্লিষ্টদের মতে, সাম্প্রতিক বছরগুলোয় রমজান এলেই বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মধ্যে ইফতার মাহফিল আয়োজনের হিড়িক পড়ে। এখন তা পরিণত হয়েছে রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে। রমজানে সংযম চর্চার কারণে রাজনৈতিক কর্মসূচি তেমন থাকে না। তাই কর্মীদের চাঙ্গা রাখতে নেতারা প্রায় মাসজুড়ে আয়োজন করেন ইফতার অনুষ্ঠানের। আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা এবারও আয়োজন করেছেন ইফতার অনুষ্ঠানের। দলীয় সূত্রমতে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পৌনে দুই বছর বাকি থাকলেও মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীরা।
এবারের রমজানকে অন্যতম টার্গেট তাদের। ইফতারের আয়োজন ও অংশগ্রহণের পাশাপাশি জাকাত বিতরণের মাধ্যমে সাধারণ ভোটারদের মন জয় করতে চান তারা। এজন্য প্রস্তুতি শুরু করেছেন মনোনয়নপ্রত্যাশীরা। জানা গেছে, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ ইফতার কর্মসূচি না রাখলেও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রায় প্রতিদিনই গণভবনে ইফতারের আয়োজন রেখেছেন। এতে পর্যায়ক্রমে অংশ নেবেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, আইনজীবী, সাংবাদিক, শিল্পী, সাহিত্যিক, কূটনীতিক, ব্যবসায়ী, আলেম-ওলামাসহ সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রীর নিকটাত্মীয়, সরকারি কর্মকর্তা ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গেও আলাদাভাবে ইফতার করবেন প্রধানমন্ত্রী। আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী সূত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর মাসব্যাপী ইফতার অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে কার্যত দল ও দলের সহযোগী সব সংগঠনের নেতা-কর্মীকে চাঙ্গা করা হবে। আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এ কে এম এনামুল হক শামীম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমরা দলকে সুসংগঠিত এবং একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত করতে দীর্ঘদিন ধরে মাঠে আছি। রমজানে সাধারণত বড় কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি না থাকায় ইফতারের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় নেতা ও দলের এমপি-মন্ত্রীরা নিজ নিজ এলাকায় যাব। দলকে আরও বেশি সংগঠিত করব। ’ জানা গেছে, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা বিভিন্ন ইফতার আয়োজনে অংশগ্রহণের মাধ্যমে কর্মীদের সঙ্গে মিলিত হবেন। কেন্দ্রের পক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত না এলেও ঢাকা মহানগরী আওয়ামী লীগ ইফতারকেন্দ্রিক রাজনীতি করবে রমজানজুড়েই। ঢাকা মহানগরী আওয়ামী লীগ প্রতিদিন বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ইফতারের আয়োজন রাখবে। মহানগরী আওয়ামী লীগের প্রতিটি থানা ও ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে ইফতার অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন দলের কেন্দ্রীয় ও মহানগরী নেতারা। এ প্রসঙ্গে ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে কথা বলে ৮ জুন মহানগরী দক্ষিণের ইফতারের আয়োজন করা হতে পারে। ’ তিনি বলেন, ‘দক্ষিণের সব থানা ও ওয়ার্ড পর্যায়ে ইফতারের আয়োজন করা হয়েছে। এতে মহানগরীর সভাপতি-সম্পাদক ছাড়াও নগরীর নেতারা উপস্থিত থাকবেন। মূলত এর মাধ্যমে নেতা-কর্মীদের চাঙ্গা রাখা এবং সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হবে। ’ আওয়ামী লীগ মনে করছে, ইফতারকেন্দ্রিক সাংগঠনিক কর্মসূচিতে দল চাঙ্গা হবে।
এসব কর্মসূচিতে সরকারের সিনিয়র মন্ত্রীরাও অংশ নেবেন। ইফতার অনুষ্ঠানের আলোচনায় দলের নীতিনির্ধারকরা সরকারের উন্নয়ন পরিকল্পনার পাশাপাশি দলকে দিকনির্দেশনাও দেবেন। অন্যদিকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নপ্রত্যাশীরাও রমজানকে টার্গেট করেছেন। তারা জাকাত বিতরণ ও ইফতার পার্টির মাধ্যমে মানুষের কাছাকাছি যাওয়ার চেষ্টা করবেন। কুষ্টিয়া-৪ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী মিজানুর রহমান বিটু বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘সারা বছর মানুষের কাছাকাছি থাকি। তাদের সুখে-দুঃখে পাশে দাঁড়াই। রমজানে মানুষের কাছে যাওয়ার আরও সহজ উপায় ইফতার পার্টি ও জাকাত বিতরণ। ’ প্রতি বছরের মতো এবারও রমজানে জাকাত বিতরণ করবেন তিনি। ঢাকা-৫ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী ও বর্তমান এমপিপুত্র মশিউর রহমান মোল্লা সজল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘ঢাকা-৫ আসনের নির্বাচনী এলাকার প্রতিটি ওয়ার্ডে দলের ইফতার আয়োজনে অংশ নেব। অন্য যে কোনো মাসের চেয়ে মানুষের কাছাকাছি যাওয়ার উত্তম সময় হচ্ছে রমজান। ’ রমজানে রাজনৈতিক কর্মসূচি না থাকলেও ইফতার রাজনীতির মাধ্যমে দল আরও বেশি চাঙ্গা ও সুসংগঠিত হবে বলে মনে করেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কর্নেল মুহম্মদ ফারুক খান (অব.)। বাংলাদেশ প্রতিদিনকে তিনি বলেন, ‘রমজানে নেতৃস্থানীয় নেতা ও দলের এমপি-মন্ত্রীরা তৃণমূলে যাবেন। ইফতার পার্টির মাধ্যমে মানুষের কাছে যাব। মূলত তৃণমূলের সঙ্গে মেলবন্ধন সৃষ্টি করা হবে ইফতার রাজনীতির মাধ্যমে। সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন