রাঙামাটিতে ১৫ হাজার মানুষ পাহাড় ধসের ঝুঁকিতে
রাঙামাটি প্রতিনিধিঃ
পার্বত্য জেলা রাঙামাটিতে ৩ হাজার ৩৭৮ পরিবারের প্রায় ১৫ হাজার লোক পাহাড় ধসের ঝুঁকিতে বসবাস করছে।
শুধু রাঙামাটি পৌর সদরের নয়টি ওয়ার্ডের ৩৪টি এলাকায় ৬০৯টি পরিবারের ঝুঁকিপূর্ণ বাসের কথা জেলা প্রশাসনই চিহ্নিত করেছে।
পাহাড়ি এলাকা বিবেচনায় আগে কখনও ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা চিহ্নিত না করলেও গত বছরের ১২ জুন প্রবল বৃষ্টিতে পাহাড় ও ভূমিধসে ১২০ জন নিহতের পর রাঙামাটি জেলা প্রশাসন এ তালিকা করে।
সামনের বর্ষা মৌসুমে পাহাড়ধসে প্রাণহানি ঠেকাতে রাঙামাটি পার্বত্য জেলায় ঝুঁকিপূর্ণ স্থান নির্ধারণ করে তা মোকাবেলায় বিভিন্ন প্রস্তুতিও ইতোমধ্যে নিয়েছে।
জেলা প্রশাসক এ কে এম মামুনুর রশিদ বলেন, সামনের বর্ষা মৌসুমে যাতে গত বছরের মতো পাহাড় ধসে মাটি চাপায় ব্যাপক প্রাণহানি না ঘটে সেজন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে ‘সর্বোচ্চ প্রস্তুতি’ নেওয়া হয়েছে।
“প্রাকৃতিক দুর্যোগ তো ঠেকানো যাবে না। তবে এতে প্রাণহানি যেন এড়ানো যায়, সেজন্য সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে আমাদের।”
পাহাড়ের পাদদেশে যেসব স্থান নিরাপদ নয়, তা চিহ্নিত করে সেখানে বসবাসকারীদের সরিয়ে নিতে আশ্রয় কেন্দ্র নির্ধারণ এবং পর্যাপ্ত ত্রাণের ব্যবস্থা করার কথাও বলেন জেলা প্রশাসক।
জেলা প্রশাসনের হিসেবে, রাঙামাটি পৌরসভাসহ ১০টি উপজেলায় মোট তিন হাজার ৩৭৮টি পরিবারের ১৫ হাজারেরও বেশি লোক পাহাড় ধসের ঝুঁকিতে আছে।
এর মধ্যে রাঙামাটি পৌর সদরের নয়টি ওয়ার্ডে ৩৪টি স্থানে ৬০৯ পরিবারের প্রায় আড়াই হাজার লোক ঝুঁকি নিয়ে বাস করছে।
এগুলোর মধ্যে রয়েছে চম্পানির মার টিলা, চেঙ্গির মুখ, এসপি অফিস সংলগ্ন ঢাল, মাতৃমঙ্গল এলাকা, কিনারাম পাড়া, র্স্বর্ণটিলা, রাজমনি পাড়া, পোস্ট অফিস কলোনি, মুসলিম পাড়া, কিনা মোহন ঘোনা, নতুন পাড়া পাহাড়ের ঢাল, শিমুলতলী, রূপনগর এলাকা পাহাড়ের ঢাল, কাঁঠালতলী মসজিদ কলোনি, চম্পকনগর পাহাড়ের ঢাল, আমতাবাগ স্কুলের ঢাল, জালালাবাদ কলোনি পাহাড়ের ঢাল।
এর বাইরে রাঙামাটি সদর উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নে ৭৫০ পরিবারের তিন হাজার ৪২৪ জন লোক পাহাড়ের ঢালে ঝুঁকিতে আছে।
গত বছরে স্মরণকালের ভয়াবহতম পাহাড় ধসের ঘটনায় নিহত ১২০ জনের মধ্যে রাঙামাটি পৌরসভা ও সদর উপজেলাতেই মারা যায় পাঁচসেনা সদস্যসহ ৭৩ জন।
এর বাইরে কাউখালী উপজেলায় ২১ জন, কাপ্তাইয়ে ১৮ জন, জুরাছড়িতে ছয়জন ও বিলাইছড়ি উপজেলাতে দুজন নিহত হন। এছাড়া এ ঘটনায় আহত হন সর্বমোট ১৯২জন।
জেলা প্রশাসনের হিসাবে, জুরাছড়ি উপজেলার চার ইউনিয়নে ৬৪ পরিবারের ৩২০ জন, নানিয়ারচর উপজেলার চার ইউনিয়নে ২৩৯ পরিবারের এক হাজার ১১১ জন, লংদুতে তিন ইউনিয়নের ১০৮ পরিবারের ৫১৪ জন, বিলাইছড়ির তিন ইউনিয়নের ২৪৫ পরিবারের এক হাজার ১৭৯ জন, কাউখালী উপজেলার চার ইউনিয়নের ১২০ পরিবারের ৫৫৩ জন লোক পাহাড় ধসের ঝুঁকিতে আছে।
এর বাইরে রাজস্থলী উপজেলায় তিন ইউনিয়নে ২৮৬টি পরিবারের এক হাজার ১৮২জন, কাপ্তাই উপজেলার পাঁচ ইউনিয়নে ৫৮০ পরিবারের দুই হাজার ৭৯৩ জন, বরকল উপজেলার পাঁচ ইউনিয়নের ৩৭৭ পরিবারের এক হাজার ৮৫০ জন লোক ঝুঁকিতে আছে।
রাঙামাটি জেলা প্রশাসনের এক কর্মকর্তা বলেন, পাহাড়ি জেলাটিতে পাহাড়ের ঢালে বা খাঁজে দীর্ঘদিন ধরেই পাহাড়ি-বাঙালিরা ঘর বানিয়ে বসবাস করে আসছে। সে কারণে অতীতে কখনও ঝুঁকিপূর্ণ স্থান ও বসতি চিহ্নিত করা হয়নি। গত বছর পাহাড় ধসে ব্যাপক প্রাণহানির পর ঝুঁকিপূর্ণ বসতির এ তালিকা করা হয়।
রাঙামাটির জেলা প্রশাসক মামুনুর রশিদ বলেন, “নতুন করে যাতে পাহাড়ের খাঁজে বা ঢালে ঝুঁকি নিয়ে কেউ বসতি করতে না পারে, সেদিকেও আমরা দৃষ্টি রাখছি।”
গত বছরের পাহাড় ধসে ১২০ জন নিহত হওয়ার পাশাপাশি ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়ে বহু পরিবার আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছিল।
প্রশাসনের হিসেবে, জেলায় ১৮ হাজার ৫৫৮টি পরিবার কমবেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ১২৩১টি বাড়ি সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত এবং নয় হাজার ৫৩৭টি বাড়ি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।
জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে হতাহত এবং ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে চাল, তাঁবু, কম্বল, ঢেউটিনসহ বিভিন্ন ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছিল।