বিজয়ের মাস শুরু
শুক্রবার বিজয়ের মাস ডিসেম্বর শুরু হলো। ছেচল্লিশ বছর আগে ১৯৭১ সালের এই দিনে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় হয়।
জাতি যথাযোগ্য মর্যাদা ও বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্যদিয়ে বিজয়ের মাস উদযাপনের লক্ষ্যে মাসব্যাপি কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সঙ্গে দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধ এবং ৩০ লাখ শহীদের জীবনোৎসর্গ ও দুই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমহানি ও ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশ শুরু করে তার পথচলা।
বাংলাদেশের সুদীর্ঘ রাজনৈতিক ইতিহাসে শ্রেষ্ঠতম ঘটনা হলো ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ। সশস্ত্র স্বাধীনতা সংগ্রামের এক ঐতিহাসিক ঘটনার মধ্যদিয়ে বাঙালি জাতির কয়েক হাজার বছরের সামাজিক রাজনৈতিক স্বপ্ন সাধ পূরণ হয় এ মাসে।
বাঙালি জাতির সর্বশ্রেষ্ঠ অর্জন মুক্তিযুদ্ধের অবিস্মরণীয় গৌরবদীপ্ত চূড়ান্ত বিজয় এ মাসের ১৬ ডিসেম্বর অর্জিত হয়। স্বাধীন জাতি হিসেবে বিশ্বে আত্মপরিচয় লাভ করে বাঙালিরা। অর্জন করে নিজস্ব ভূখন্ড আর সবুজের বুকে লাল সূর্য খচিত নিজস্ব জাতীয় পতাকা । ভাষার ভিত্তিতে যে জাতীয়তাবাদ গড়ে উঠেছিল, নয় মাসব্যাপি এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে ঘোষিত স্বাধীনতা পূর্ণতা পায় এ দিনে।
বাঙালির হাজার বছরের স্বপ্নপূরণ হবার পাশাপাশি বহু তরতাজা প্রাণ বিসর্জন আর মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে এই অর্জন হওয়ায় বেদনাবিঁধূর এক শোকগাঁথার মাসও এই ডিসেম্বর।
এ মাসেই স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি তাদের এদেশীয় দোসর রাজাকার-আলবদর আল শামসদের সহযোগিতায় জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান-বুদ্ধিজীবী হত্যার নৃশংস হত্যাযজ্ঞে মেতে ওঠে। সমগ্র জাতিকে মেধাহীন করে দেয়ার হীন উদ্দেশ্যেএ ধরনের ঘৃণ্য হত্যাযজ্ঞের দ্বিতীয় কোন নজীর বিশ্বে নেই।
১৯৭১ সালের ডিসেম্বর মাসের শুরু থেকেই মুক্তিযোদ্ধাদের গেরিলা আক্রমণ আর ভারতীয় মিত্রবাহিনীর সমন্বয়ে গঠিত যৌথবাহিনীর জল, স্থল আর আকাশপথে সাঁড়াশি আক্রমণের মুখে বর্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর পরাজয়ের খবর চারদিক থেকে ভেসে আসতে থাকে।
’৭১-এর ১৬ ডিসেম্বর ঢাকার ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে (সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) পাকিস্তানি বাহিনী আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়। যেখান থেকে ৭ মার্চ স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম,’ বলে স্বাধীনতার ডাক দেন, সেখানেই পরাজয়ের দলিলে স্বাক্ষর করে পাকিস্তানি জেনারেল নিয়াজী। নয় মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হয়। আর জাতি অর্জন করে হাজার বছরের স্বপ্নের স্বাধীনতা।
বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক এই ভাষণ এ বছর জাতিসংঘে শিক্ষা ও বিজ্ঞান বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা ইউনেস্কোর স্বীকৃতি লাভ করে। এ উপলক্ষে গত ২৫ ডিসেম্বর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের একই স্থানে আনন্দ শোভাযাত্রাসহ মহাসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
মহান এ বিজয়ের মাস উদযাপনে জাতীয় কর্মসূচির পাশাপাশি বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠনের পক্ষ থেকে বিস্তারিত কর্মসূচি নেয়া হয়েছে। বিজয়ের মাসের প্রথম দিনেই বিভিন্ন সংগঠন বিস্তারিত কর্মসূচি পালন করবে। এসব কর্মসূচির মধ্যে আছে বিজয়ের মাসকে স্বাগত জানিয়ে সমাবেশ , মানববন্ধন, বিজয় র্যালি, মুক্তিযোদ্ধা কবরস্থানে শ্রদ্ধা নিবেদন ইত্যাদি। ১ থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত এ কর্মসূচি চলতে থাকবে।
বিজয়ের মাসের প্রথম দিনকে সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম-মুক্তিযুদ্ধ ৭১‘মুক্তিযোদ্ধা দিবস ’ হিসেবে উদযাপন করবে। এ উপলক্ষে সকাল ৯ টায় মিরপুরের শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতি সৌধে অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করা হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩ ডিসেম্বর বিজয় র্যালি অনুষ্ঠিত হবে। কর্মসূচি অনুযায়ী বিজয়র্যালিতে অংশগ্রহণের জন্য এদিন সকাল ১০টা ৪৫ মিনিটে অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে জমায়েত হবে। সেখান থেকে বেলা ১১টায় ‘বিজয় র্যালি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গিয়ে শেষ হবে। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর বিজয় দিবস উপলক্ষে সাত দিনব্যাপি কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। ১০ ডিসেম্বর থেকে এ কর্মসূচি শুরু হবে।