রবিবার, ৬ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

ধানের পরিবর্তে বাদাম চাষে ঝুঁকছেন

সেরাকণ্ঠ ডট কম :
জুলাই ২, ২০১৭
news-image

ধান আবাদে খরচ ও খাটনি দুটোই বেশি। ধান লাগানোর পর থেকে দুঃচিন্তায় থাকতে হয়। তার মধ্যে আবার কয়েক বছর ধরে ধানের বাজার দর খারাপ যাচ্ছে। একারণে বোরো ধান আবাদে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন নীলফামারীর কৃষকরা। ধানের বদলে বাদাম চাষের দিকে ঝুঁকছেন তারা।
নীলফামারীর ডোমার ইউনিয়নের পূর্ব চিকনমাটি গ্রামের কৃষক রশিদুল ইসলাম(৪০)। চলতি মৌসুমে তিনি চিনা বাদাম আবাদ করেছেন এক বিঘা জমিতে। নিজেসহ আরো কয়েকজন শ্রমিক নিয়ে ফসল তুলতে শুরু করেছেন জমি থেকে।
তিনি বলেন, ধান আবাদে লাভতো দূরের কথা আসল টাকা তুলতেই টানাটানি হয়ে পড়ে।
রশিদুলের মতো অনেক কৃষকই বোরো ধানের পরিবর্তে রবি শস্য আবাদ করছেন।
বিগত কয়েক বছর বোরো আবাদে লোকসান হওয়ায় বাদাম ও ভুট্টা আবাদে মনোযোগ দিয়েছেন উপজেলার ডোমার সদর, বামুনিয়া, বোড়াগাড়ি, জোড়াবাড়ি, ভোগডাবুড়ি, সোনারায় ও হরিণচড়া ইউনিয়নের কৃষকরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এ উপজেলার মাটি বেলে দোঁআশ হওয়ায় বাদাম চাষের উপযোগী। যার কারণে কৃষি বিভাগের সহযোগিতায় কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করে আবাদ করা হচ্ছে বাদাম।
কৃষি কর্মকর্তা ও কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চাষের খরচ কম, উৎপাদন এবং বাজার দর ভালো হওয়ায় বাদাম আবাদে আগ্রহ বেড়েছে উপজেলার কৃষকদের মাঝে।

ডোমার ইউনিয়নের কৃষক আবু তালেব গত কয়েক বছর থেকে চিনা বাদাম আবাদ করছেন। এতে তিনি বেশ লাভবান হচ্ছেন বলে জানালেন।
তিনি জানান, বিঘা প্রতি বাদাম আবাদে খরচ হয় ৬ হাজার টাকা। আর বিঘা প্রতি অন্তত ৬ মণ উৎপাদনও হয়। দুই হাজার টাকা করে মণ বিক্রি হলেও ১২ হাজার টাকা পাওয়া যায়। খরচ বাদে লাভ থাকে ৬ হাজার টাকা।

আরেক চাষী আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, প্রথমবারের মতো এবার আমি ৫০ শতাংশ জমিতে হাইব্রিড জাতের চিনা বাদাম আবাদ করেছি। সেচের তেমন প্রয়োজন হয় না, কীটনাশক খরচও কম। নিরানি নেই, সবমিলিয়ে সহায়ক কৃষকদের জন্য শস্যটি(বাদাম)।
ডোমার সদর ইউনিয়নের পূর্ব চিকনমাটি ছোট রাউতা ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আবু তালেব বলেন, মাঠ পর্যায়ে বাদাম চাষে আগ্রহ সৃষ্টি করতে কৃষকদের আমরা উদ্বুদ্ধ করছি। প্রদর্শনী প্লট করে আবাদ বাড়ানোর চেষ্টা করছি।
তিনি বলেন, ১১৫-১২০দিনের মধ্যে বাদাম ঘরে তোলা যায়। বাজারে দামও ভালো।

কৃষি বিভাগ সূত্র জানায়, নীলফামারী জেলায় ২০১৪-১৫ মৌসুমে ২২৯ হেক্টর, ২০১৫-১৬ মৌসুমে ৯১৭ হেক্টর এবং ২০১৬-১৭ মৌসুমে ১০৫০ হেক্টর জমিতে বাদামের আবাদ হয়েছে।
অন্যদিকে গত মৌসুমের চেয়ে চলতি বোরো মৌসুমে ধানের আবাদ কমেছে। ২০১৫-১৬ মৌসুমে বোরো আবাদ ৮৩ হাজার ৬৬৭ হেক্টরে অর্জিত হলেও এবারে অর্জিত হয় ৮২ হাজার ১১০ হেক্টরে।
জানতে চাইলে ডোমার উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জাফর ইকবাল বলেন, গেল কয়েক বছরে কৃষকদের মাঝে বাদাম আবাদের আগ্রহ বেড়েছে। কৃষকরা জমি লিজ নিয়ে বাদাম করছেন।
ভালো ফলন ও দাম পাওয়ায় কৃষকদের মধ্যে আগ্রহ দিন দিন বাড়ছে বলে জানালেন এ কৃষি কর্মকর্তা।