বুধবার, ৪ঠা ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

অভাবে দিন কাটছে সাইফুলের পরিবারের

সেরাকণ্ঠ ডট কম :
জুলাই ১, ২০১৭
news-image

অভাব আর লাশ না পাওয়ার আক্ষেপে দিন কাটছে গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় জঙ্গি হামলায় নিহত বাবুর্চি সাইফুল ইসলাম চৌকিদারের পরিবারের।

শুক্রবার সকালে শরীয়তপুর জেলার নড়িয়া উপজেলার কলুকাঠি গ্রামে সাইফুলদের বাড়িতে গেলে কথা হয় তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে। সাইফুলের বৃদ্ধ মা সমমেহের বেগম বার্ধক্যজনিত নানা রোগে ভুগছেন। তারপরেও ছেলের প্রসঙ্গ উঠতেই বিছানায় শুয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। আক্ষেপ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘একটা বছর হইয়া গেল সরকারের কাছে বিচারও পাইলাম না, আমার পোলারেও পাইলাম না। চুরি কইরা মাটি দিয়া দিল। লাশটা দিলে নায়নাতকুরে দেখতে পারতো, আমিও একটু দেখতাম।’

তিনি আরও বলেন, ‘রক্ত নিল, দরখাস্ত নিল, ডিবি অফিসার মাথায় হাত বুলিয়ে কথা দিল, কিন্তু কথা রাখলো না। আমার পোলার লাশটারে দিল না। চুরি কইরা মাটি দিয়া দিল।’

একবছর আগে গুলশানে হলি আর্টিজান বেকারিতে ভয়াবহ জঙ্গি হামলায় নিহত হয় তার ছেলে ও হলি আর্টিজানের বাবুর্চি সাইফুল ইসলাম চৌকিদার। লাশ না পাওয়ার আক্ষেপ প্রতিনিয়তই তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে পরিবারটিকে। সেই সঙ্গে পরিবারে আর কোনও উপার্জনক্ষম ব্যক্তি না থাকায় অভাব-অনাটনে দিনা কাটছে পরিবারটি। তিন সন্তান সামিয়া, ইমনি ও হাসান, শাশুড়ি সমমেহের বেগম ও নিজের মা মমতাজ বেগমকে নিয়ে ৬ জনের সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন সাইফুলের স্ত্রী সোনিয়া বেগম।

 

সোনিয়া বেগম বলেন, ‘লাশ ফেরত দেবে বলে জানিয়েছিল। এজন্য বোন জামাই কবির ভূঁইয়া লাশ ফেরত চেয়ে আবেদনও করেছিলেন। পরে আবার বললো মাকে আবেদন করতে হবে। এজন্য মাকে ঢাকা নিয়ে গেলাম। ডিএনএ টেস্টের জন্য রক্ত নিল। নতুন করে আবেদনও করলাম। কিন্তু আবেদন জমা নিল না। দাফনের সময় বললেও আমরা একটু শেষ দেখা দেখতে পারতাম।’

স্বামী মারা যাওয়ার পর থেকে সোনিয়া বেগমের মা মমতাজ বেগমও নাতি-নাতনিদের লালন পালনের জন্য এখানে এসে থাকছেন। সাইফুলের বড় মেয়ে চতুর্থ শ্রেণিতে ও ছোট মেয়ে প্রথম শ্রেণিতে পড়ে। সংসারে উপার্জনক্ষম কেউ নেই। একমাত্র বাড়িটা ছাড়া কোনও জমিও নেই। সাইফুল মারা যাওয়ার পর সরকারি বা বেসরকারিভাবে কোনও ধরনের সহায়তা পাননি। আত্মীয়-স্বজন ও মাঝে মাঝে হলি আর্টিজান কর্তৃপক্ষের পাঠানো সহায়তা দিয়ে কোনও রকম টেনেটুনে চলছে ৬ জনের সংসার।

সোনিয়া বেগম বলেন, ‘হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁ থেকে ২/৩ মাস পরপর ১০ হাজার করে টাকা পাঠায়। তারা বলেছে, রেস্তোরাঁ ঠিকমতো চালু হলে নিয়মিত সহায়তা দেবে এর বাইরে আত্মীয়-স্বজনদের সহায়তা ও ধারদেনা করে কোনও রকমে দুই মেয়ের পড়াশুনা ও সংসার চালিয়ে যাচ্ছেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘লঞ্চডুবিতে নিহত হলে সরকার নিহতের পরিবারকে সহায়তা করে। তাহলে জঙ্গি হামলায় নিহত হলে সরকার কেন তার পরিবারকে সহায়তা করবে না?’

সাইফুলের স্ত্রী বলেন, ‘প্রত্যেক বাবাই তাদের সন্তানদের কাছে নায়কের মতো। আমার সন্তানদের নায়ক হারিয়ে গেছে। হারিয়ে গেছে শিশু হাসানের না দেখা নায়ক।’

তিনি আরও বলেন, ‘ছেলে সন্তানের খুব শখ ছিল সাইফুলের। এজন্য দুই মেয়ে হওয়ার পর আবার সন্তান নিয়েছিলাম আমরা। কিন্তু সাইফুল তো ছেলেকে দেখে যেতে পারলো না। আমার ছেলেও কোনও দিন বাবাকে খুঁজে পাবে না। লাশটা ফেরত দিলেও ছেলেকে বলতে পারতাম এটা তোর বাবার কবর।’