শুক্রবার, ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

হিজাব নিয়ে যা বললেন আমেরিকান এক মডেল

সেরাকণ্ঠ ডট কম :
এপ্রিল ২৭, ২০১৮
news-image

সোমালি আমেরিকান বংশোদ্ভূত নারী হালিমা এডেন। ডাক নাম হালিমা। তার জন্ম কেনিয়ার উদ্বাস্তু শিবিরে। এমন অবহেলিত একটি স্থানে জন্ম হলেও সারাবিশ্বের মানুষ তাকে আজ চিনছে নামকরা মডেল হিসেবে। হিজাব পরা নারীদের দেখতে দেখতে ক্রমে হালিমা হিজাবের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে ওঠেন। শুধু তাই নয়, তিনি নিজেও হিজাব পরা শুরু করেন। অথচ তিনি ১৯৯৭ সালের ১৯ সেপ্টেম্বরে জন্ম নেয়া প্রায় ২০ বছরের একজন নারী। তাই বুরকিনি, হিজাব ইত্যাদি পরার ইচ্ছা জাগতে থাকে অনেক কম বয়স থেকে। হালিমা এডেন এ সংক্রান্ত নানা আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে মুসলিম বিশ্বকে রীতিমতো অবাক করেছেন।

তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মিস মিনেসোটা প্রতিযোগিতামূলক এক জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানে হিজাব ব্যবহার করেন। তার হিজাব পরা দেখে অনেকেই এর প্রতি আকৃষ্ট হয়ে ওঠেন। অনেকে তা পরাও শুরু করেন।

এভাবে হিজাব পরা মেয়েদের সংখ্যা বাড়তে থাকে। মডেলিংয়ের মাধ্যমে হিজাব পরার বিষয়টি সুন্দরভাবে উপস্থাপন করেন। মূল লক্ষ্য হলো, নারীরা এতে ঝুঁকে পড়–ক। গণমাধ্যমে এক বিবৃতি দেয়ার সময় তিনি বলেন, ‘বর্তমানে অনেকে হিজাব পরা ত্যাগ করলেও তা পরা নারীর সংখ্যা ক্রমে বাড়ছে। মনে হয় এই ধারা অব্যাহত থাকবে। আমি গুরুত্বপূর্ণ এ ব্যাপারে মুসলিম নারীদের মধ্যে অনুপ্রেরণা জোগাতে চাই। এ ব্যাপারে আমি অনেকের কাছ থেকে সহযোগিতা পাচ্ছি, যা আমার এ সংক্রান্ত কাজকে রীতিমতো সহজ করে দিয়েছে। তিনি আরও বলেন, মার্জিত এই মূল্যবোধের সাথে কেউ বিরোধিতা করলে আমি হিজাব না বলে ‘মাথা আবরণ’ বলি, যাতে তারা সহজে তা বুঝতে পারে। আর এ কারণেই তা বোঝার পর হিজাব পরা নারীর সংখ্যা বাড়ছে। এ ব্যাপারে উৎসুক অনেকের কাছ থেকে এ সংক্রান্ত ই-মেল বার্তা পান। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে হালিমা এডেনকে নানা প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়ার জন্য ডাকও পড়ে। তাতে তিনি সাড়াও দেন।

সাঁতার প্রতিযোগিতায় (মেয়েদের) একটি ঢিলেঢালা বুরকিনি পরার ব্যাপারেও সুপারিশ করেন তিনি এবং একজন মডেল সাঁতারু হিসেবে নারীদের জন্য এই পোশাক পরিধানের বিষয়টি অনুমোদন পায়। এতে তো অনেকেই খুশি। দ্য মিস ইউনিভার্স অরগ্যানাইজেশন নামক সংস্থাটি যে বিষয়টি অবিশ্বাস্যভাবে গ্রহণ করে সেটি হলো, এই অনুষ্ঠান নারীদের দ্বারা পরিচালনার বিষয়টি।
সুন্দরী মেয়েদের মিস ইউনিভার্স অরগ্যানাইজেশনের মাধ্যমে নারীর ক্ষমতায়নের সাথে তার এই শালীন পোশাক ভালোই গ্রহণযোগ্যতা পায়। সংস্থাটির কর্মকর্তারা মনে করেন, প্রকৃত পরিবর্তন আনয়নে একজন প্রত্যয়ী নারী জানেন যে তিনি ক্ষমতাপ্রাপ্ত।

কোনো একপর্যায়ে এডেন হিজাব, বুরকিনি ইত্যাদি পরিধানের ব্যাপারে তার সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে বাধার সম্মুখীন হন। তখন তিনি মনে করেন, সম্প্রদায় তার এ সংক্রান্ত মানসিকতাকে বুঝতে ভুল করছে। এমনকি তিনি তিক্ত অভিজ্ঞতারও সম্মুখীন হন সোমালিয়াতে। এ ব্যাপারে এডেন বলেন, এ ধরনের বিঘœতা বা মানসিকতা একটি সাংস্কৃতিক তিক্ততা ছাড়া অন্য কিছু নয়। তার পরও তিনি এ সংক্রান্ত প্রচেষ্টা চালিয়ে যান।

এ ব্যাপারে তিনি বলেন, একসময় মানুষ জানত না বুরকিনি, হিজাব ইত্যাদি কী জিনিস। শুনলে অবকা হবেন, আমিও এ ব্যাপারে তেমন কিছু জানতাম না। ক্রমে প্রয়োজনের তাগিদেই আমি এসবের সাথে পরিচিত হতে থাকি।

নারীর সৌন্দর্য সম্বন্ধে তিনি বলেন, নারীর দীঘল কালো চুল আর নীলাভ চোখ বলতে যে রূপের বর্ণনা দেয়া হয়েছে, আমি তাতে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়তে চাই। অন্যকিছুর মাধ্যমেও তো এমন রূপের অধিকারী হওয়া যায়। হিজাব পরার গুরুত্ব এতটাই বেশি।

হালিমা বলেন, প্রতিনিধিত্ব হচ্ছে কোনো বিষয়ের ব্যাপারে এক ধরনের প্রাধান্য পাওয়া। অনেক মুসলিম নারী নানা ক্ষতির শিকার হচ্ছেন। কেননা আমি অনেক ক্ষেত্রেই অনুকূল প্রতিনিধিত্ব দেখতে পাই না। তবে হিজাব পরা বেশির ভাগ মেয়ে অনুকূল পরিবেশ পেয়ে থাকে। তিনি মিস ইউএসএ প্লাটফর্মকে ব্যবহার করে যাচ্ছেন সারা বিশ্বের নারীদের সাথে সংযোগ বা যোগাযোগ স্থাপনের জন্য। তিনি বলেন, তানজানিয়া, ইন্দোনেশিয়া প্রভৃতি দেশের নারীরা এ সংক্রান্ত অনুকূল পরিবেশ পেয়েছে বলে তারা গর্বিত। আমার হৃদয় ভেঙে যায় যখন নারীরা নির্যাতিত কাহিনীর অংশীদার হয়। তার পরও বলতে হয়ে অনেকের আত্মমর্যাদাবোধ আছে। মানুষের নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাব ক্ষেত্রে বাধাবিপত্তি থাকবেই। এ ক্ষেত্রে সবাইকে একজোট হতে হয় এবং এখনই এর উপযুক্ত সময়। কোনো কিছু না বুঝে তা ঘৃণা বা অবজ্ঞা করা এক অদ্ভুত আচরণ।