শুক্রবার, ১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

রূপার হাতে বিয়ার…

সেরাকণ্ঠ ডট কম :
জুলাই ১, ২০১৭
news-image

পৃথিবীর সবচেয়ে পিচ্ছিল জিনিসটা বোধহয় মানুষের বমি। সেদিন রাতে প্রচণ্ড বমি করলো রূপা। কেন এমন হচ্ছে হঠাৎ করে-কোনো কিছুতেই হিসেব মিলাতে পারছে না সে। নিজের বমির ওপর পা পিছলে অবস্থা আরো ভয়ানক। রাত বেড়ে ২ টা গড়িয়েছে। এ মুহূর্তে কার সাহায্য চাইবে-সেটাও মাথায় আসছে না।

রূপার বন্ধু মিহির যেহেতু ভোরের আলো না দেখে ঘুমাতে যায় না, তাই ফোনটা মিহিরকেই করলো সে। এত রাতে রূপা সাধারণত কোনোদিন মিহিরকে ফোন করে না। রূপার কণ্ঠস্বর শুনেই বুঝতে পারলো অবস্থা ভালো নয়। পকেটে টাকা নেই মিহিরের যে যাত্রাবাড়ী থেকে সিএনজি ভাড়া করে রূপার কাঁঠালবাগান আসবে সে। পাশের রুমমেটও ঘুমে। বাধ্য হয়ে রুমমেট আরিফের পকেট থেকে ২০৭ টাকা নিয়ে একটা চিরকুট লিখে বাসা থেকে বের হওয়া।

 

গুলিস্তান ফ্লাইওভার পার হতে না হতেই মিহিরেরও বমি শুরু হলো। রূপাকে ফোন করে জানাবে-কিন্তু রূপা তখন ফোন ধরছে না। বাথরুমে বমি করতে করতে অজ্ঞান হয়ে পড়েছে। সেই রাতে কেউ কারো কাছে পৌঁছাতে পারলো না, এই আফসোস নিয়ে খারাপ শরীরেই দুপুরে রূপার বাসায় আসলো মিহির।

৫ তলার সিঁড়ি ভেঙে উঠতে উঠতে জীবনটা বেরিয়ে যাচ্ছিল মিহিরের। তারপরও উঠে যা দেখলো তাতে পিলে চমকে উঠলো তার। বিয়ার হাতে বসে আছে তার প্রিয়তমা বন্ধু রূপা। একা একাই গিলছে, বেশ আরাম করেই গিলছে। সামনে আরো ৩ টা বিয়ারের ক্যান দেখে মুচকি হেসে বললো- এই তাহলে অবস্থা। রাতে আমাকে অযথা প্যারা দিলি কেন? উত্তরে রূপাও হো হো করে হেসে বললো- তুই আমার বন্ধু তো। তাই তোকে জ্বালালাম। আমার কিছুই হয়নি। রাতে বমিও করি নাই।

মিহিরের অসাধারণ অলৌকিক গুণের মধ্যে একটা হলো কেউ মিথ্যা বললে ধরে ফেলতে পারার ক্ষমতা। সেই ক্ষমতাবলে বুঝলো রূপা মিথ্যা বলছে। তারপরও সে কথা বাড়ালো না। একটা বিয়ারের ক্যান ভেঙে চুমুক দিতেই রূপা বললো- আয় চুমু খাই। এভাবে সময় আরো গড়িয়ে যায়। এক সময় এলিয়ে শরীর এলিয়ে পড়ে রূপার। মুখ লুকাতে ইচ্ছে করে মিহিরের লোমশ বুকে। এভাবেই সন্ধ্যা নেমে এলো।

দুজনই স্নান সেরে শাহবাগে যাবে আড্ডা দিতে। রাত ১১ টা পর্যন্ত চলো প্রাণবন্ত আড্ডা। মিহির প্রচুর সিগারেট খায় বলে মাঝে মাঝে দূরত্ব বজায় রেখে গল্প চালাচ্ছিল রূপা। সাথে আরো কয়েকজন বন্ধু যোগ দিয়েছে আড্ডাতে। যখন আড্ডা ভাঙলো-রূপার নেশাও কেটে গেল। আবারো রাস্তার মধ্যেই বমি করতে শুরু করলো সে। এবার মিহির কিছু না বলে পিজি হাসপাতালে নিয়ে যায়।
চিকিৎসকরা প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে দিয়ে মোটামুটি সুস্থ করে তুললো রূপাকে। তথন রাত দেড়টা বেজে গেছে। এই সময়ের মধ্যে রূপার দুইটা টেস্টও করানো হয়েছে। রিপোর্ট কাল দেয়া হবে। সকালেই ফিরতে হবে আবার রিপোর্ট নিতে। এদিকে, রূপার বাসায় ফেরার উপায় নেই, নেই মিহিরেরও। এমনি সময় ফকিরাপুলের একটি আবাসিক হোটেলে রাত কাটালো স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে। সেই রাতে ক্লান্ত রূপাকে দেখে আনমনে মিহিরের অনেক প্রশ্ন জেগেছিল। নিজেই প্রশ্ন তৈরি করে আবার সেই প্রশ্নের সমাধান খোঁজার বৃথা চেষ্টাও করে গেল রাতভর। একই বিছানায় পাশাপশি শুয়ে রূপাকে তার বড় বেশি অচেনা মনে হচ্ছে।

মিহির রূপাকে চেনে ৬ মাস হলো মাত্র। এরই মাঝে ঘনিষ্ঠতা, বিশ্বস্ততার জায়গাটা দুজনের কাছেই পোক্ত হয়েছে। শীতের রাতে একটু ভেজা উষ্ণতা পাওয়ার আসায় দুজনই কাছাকাছি এসেছে কয়েকবার গত দু’মাস ধরে। এমন নয় যে, তারা কেউ কারো প্রতি কমিটেড। মিহির কখনো প্রটেকশন ছাড়া রূপার সঙ্গে বিছানায় যায়নি। রূপার প্রতিনিয়ত বমি নিয়ে অনেক প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে মিহিরের মনে। যাক অনেক কথা ভেবে ভেবে রাত ভোর হলো। এবার মিহিরের প্রচণ্ড ঘুম পাচ্ছে। রূপাকে জড়িয়ে ধরে সকাল সাড়ে ১০ টা পর্যন্ত ঘুমালো মিহির।

এরপর সকালের নাস্তা সেরে হাসপাতালে রিপোর্ট নিতে যাবে দুজন। রিপোর্ট নেয়ার সময় রূপা কোনোভাবেই মিহিরকে সাথে নিতে রাজি নয়। এ নিয়ে কথাকাটি যখন চূড়ান্ত পর্যায়ে মিহির চলে গেলো নিজের কাজে। রূপা হাসপাতাল থেকে রিপোর্ট নিয়ে বাসায় ফিরেছে। তার মন বিষণ্ন, ভয়াবহ খারাপ…রূপা আবারো বিয়ারের ক্যান খুলে বসেছে। আজ সে একা একা গিলবে, কাউকে ডাকবে না…
উৎসঃ purboposhchimbd